সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ-শনাক্তের হার দ্বিগুণেরও বেশি
৯ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:২৬
অবনতিশীল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ছে। সবশেষ টানা চার দিনই সংক্রমণ ছিল সহস্রাধিক। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে প্রায় দেড় হাজার, যা গত সেপ্টেম্বরের পরিস্থিতি ফিরিয়ে এনেছে। এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে সাপ্তাহিক সংক্রমণসহ অন্যান্য পরিসংখ্যানে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ তথ্য বলছে, সবশেষ সপ্তাহে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আগের সপ্তাহের তুলনায় সোয়া দুই গুণেরও বেশি। আবার সপ্তাহের ব্যবধানেই নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও দ্বিগুণ হয়েছে। একই সময়ে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুও বেড়ে হয়েছে প্রায় দেড় গুণ।
রোববার (৯ জানুয়ারি) করোনাভাইরাসের ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষা-সংক্রমণ-মৃত্যুর তথ্য বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তার তথ্য বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে মোট ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭০০ মানুষের শরীরে। অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ২৮ হাজার একশ। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা গত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
৩ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা, সংক্রমণ ও শনাক্তের হার
গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫১তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহে দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৫১টি। এর মধ্যে ২ হাজার ১৭০টি নমুনায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় এ সপ্তাহে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এরপর ২৭ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫২তম সপ্তাহে এপিডেমিওলজিক্যাল দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা আগের সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বাড়ে। এ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১ লাখ ৩২ হাজার ৮০৭টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ২১৩টিতে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৪২ শতাংশে।
সবশেষ ৩ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৩তম সপ্তাহে এপিডেমিওলজিক্যাল দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা আগের সপ্তাহের তুলনায় আরও বাড়ে। এ সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা করা হয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৩টি। এর মধ্যে ৭ হাজার ২৩৪টিতে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দ্বিগুণ ছাড়িয়ে হয় ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
সপ্তাহের হিসাবে সংক্রমণ, শনাক্তের হার দ্বিগুণেরও বেশি
তিন সপ্তাহের নমুনা পরীক্ষা ও সংক্রমণের তথ্য তুলনা করে দেখা যায়, তিন সপ্তাহেই ধারাবাহিকভাবে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে। এর মধ্যে ৫১তম সপ্তাহের তুলনায় ৫২তম সপ্তাহে নতুন সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ বেড়ে যায় অনেকটা। আগের সপ্তাহে সংক্রমণ ২৩ শতাংশ বাড়লেও এ সপ্তাহে নতুন সংক্রমণ বাড়ে ৪৮ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সংক্রমণ বেড়ে হয় প্রায় দেড় গুণ।
৫২তম সপ্তাহের তুলনায় ৫৩তম সপ্তাহের তুলনায় দেখা যায়, এবারে নতুন সংক্রমণ শনাক্তের পরিমাণ দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলছে, আগের সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণ বেড়েছে ১২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৫৩তম সপ্তাহের সংক্রমণ সংখ্যা ৫২তম সপ্তাহের সোয়া দুই গুণ।
এদিকে, ৫১তম সপ্তাহে যেখানে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১ দশমিক ৭০ শতাংশ, ৫২তম সপ্তাহে সেটি বেড়ে হয় ২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ৫৩তম সপ্তাহে সংক্রমণ শনাক্তের এই হার বেড়ে হয় দ্বিগুণেরও বেশি। এই সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
মৃত্যু বেড়ে দেড় গুণ
করোনাভাইরাসের ৫১তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গিয়েছিলেন ১২ জন। ৫২তম সপ্তাহে এসে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ১৭ জন। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু বাড়ে ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
৫৩তম সপ্তাহে এসে মৃত্যুর পরিমাণ আরও বেড়েছে। এ সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন ২৫ জন। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের তুলনায় মৃত্যু বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ মৃত্যু বেড়ে হয়েছে প্রায় দেড় গুণ।
সুস্থতা কমেছে
৫১তম এপিডেমিওলজিক্যাল সপ্তাহের তথ্য বলছে, ওই সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন ১ হাজার ৮৫৬ জন। ৫২তম সপ্তাহে সুস্থতার পরিমাণ বেড়ে যায় প্রায় ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। ওই সপ্তাহে সুস্থ হয়ে ওঠেন ২ হাজার ১৩০ জন। তবে ৫৩তম সপ্তাহে এসে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা কমে গেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এ সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩৭৫ জন, যা ৫১তম সপ্তাহের তুলনায়ও কম।
সারাবাংলা/টিআর
করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ টপ নিউজ স্বাস্থ্য অধিদফতর