‘সময় এখন আমাদের, সময় বাংলাদেশের-সেই সুযোগই নিতে হবে’
১ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:৫৫ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২২ ১৬:০২
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনের দিকে আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সময় কিন্তু এখন আমাদের, সময় বাংলাদেশের একথাটা মনে রাখতে হবে এবং সেই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে।
শনিবার (১ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পূর্বাচলের মেলা প্রাঙ্গণের অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
এবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর পূর্বাচলে রাজউকের নতুন শহরে স্থায়ী ঠিকানায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিগত সময়ে বাণিজ্যমেলা শেরেবাংলা নগরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা মেয়াদে বাণিজ্য উন্নয়নের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। নতুন নতুন আমদানি করার জায়গা, দেশ এবং সেই দেশের চাহিদা জানতে হবে মনে করেন। নতুন পণ্যের উৎপাদন করে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিকরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে প্রযুক্তির যুগ, প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সামনে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে স্কিল ম্যানপাওয়ার তৈরি করা অর্থ্যাৎ দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। আমরা কিন্তু সেদিকেও পদক্ষেপ নিয়েছি। যাতে আমরা কোনোভাবে যেন পিছিয়ে না থাকি, সেটাই আমরা দেখব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
করোনার সময়ও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য সবার প্রতি ধন্যবাদ জানান।
তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প কলকারখানা শ্রমিক থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি কিন্তু একেবারে কখনও স্থবির হয়নি, বন্ধ হয়নি যেভাবেই হোক কিছুটা আমরা চালু রাখতে হয়েছি। পৃথিবীর বহু দেশ আজকে ভীষণভাবে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। হয়ত কিছুটা ধাক্কা আমাদের লেগেছে। কারণ আমরা প্রবৃদ্ধি আট ভাগের উপরে তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম। যদিও সেটি কমে গিয়েছিল কিন্তু ইনশাল্লাহ আমরা সেটি থেকেও অতিক্রম করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’
আমরা একটা লক্ষ্য স্থির করেছি, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেটা আমাদেরকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে বলে মনে করেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘এরইমধ্যে আমাদের প্রত্যেকটা দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছি এবং আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছি, বর্তমানে আমাদের যে কূটনীতি, এটা হবে বাণিজ্যিক কূটনীতি। অর্থ্যাৎ ইকোনমিক ডিপ্লোম্যাসি এবং সেইভাবেই সকলেই কাজ করছেন এবং উদ্যোগ নিয়েছেন।’
বৈশ্বিক বাণিজ্য বৃদ্ধি প্রসারে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও চুক্তি সম্পাদনের প্রসঙ্গও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ও সমন্বিত অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৩টি দেশে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছি। সকলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে আরও সহজভাবে করতে পারি অর্থ্যাৎ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আমাদের যে মর্যাদা পেয়েছি, সেটাকে ধরে রেখে যদি কোন চ্যালেঞ্জ আসে সেটাও যেন আমরা মোকাবিলা করতে পারি, এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও আমাদের কিছু আরও গবেষণার দরকার বলে মনে করেন এবং আমাদের পণ্য চাহিদা এবং পণ্য মান সেগুলো বিশেষভাবে নিরুপণ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘রফতানির ক্ষেত্রে গুণগত মান ধরে রাখার দিকে প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যারা আছেন, আপনারা শিল্পের মালিকরা আছেন বা রফতানি করেন তাদেরকে অনুরোধ করব, আপনার নিজের দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য, আপনাদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আপনাদের পণ্যের গুনগত মান ধরে রেখে আপনি যেন আপনার বাজার ঠিক রাখতে পারেন আর উন্নত করতে পারেন, সেদিকে আপনারা অবশ্যই দৃষ্টি দেবেন। সেটিই আমি চাই। অর্থ্যাৎ নিজস্ব ব্র্যান্ডিং সৃষ্টি করে আপনাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।’
করোনাকালীনও আমাদের রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া ডিজিটাল ডিভাইস রফতানিতে আমরা কিন্তু উদ্যোগ নিয়েছি। এরইমধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছর এই করোনাকালীনও প্রায় ৪৩৬ মার্কিন ডলার রফতানি করতে সক্ষম হয়েছে।’ তা ছাড়া সার্বিক রফতানি কিন্তু আমাদের বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা।
ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সামনের দিকে আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সময় কিন্তু এখন আমাদের, সময় বাংলাদেশের একথাটা মনে রাখতে হবে এবং সেই সুযোগটা আমাদের নিতে হবে।’
তিনি বলেন, “রফতানিভিত্তিক পণ্য উৎসাহিত করার জন্য প্রতিবছর বর্ষপণ্য অর্থ্যাৎ প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করে থাকি। এবার ২০২২ সালের জন্য আইসিটি পণ্য সেবাকে জাতীয়ভাবে ‘বর্ষপণ্য’ হিসাবে ঘোষণা করছি।”
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতে অগ্রযাত্রায় রফতানি খাতের ভূমিকা অনেক বেশি। কাজেই বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারী ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন এবং বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের এই অর্থনৈতিক অগ্রগতি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় মোট রফতানি আয় পেয়েছিলাম ১৫ দশমিক ৫৬ মার্কিন ডলার। আর গত ১৩ বছরে আমরা অর্জন করেছি ৪৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কাজেই এই ব্যপক উন্নতি আমরা করতে সক্ষম হয়েছি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে আমাদের আগামী প্রজন্ম পাবে একটা সুন্দর সমাজ, সুন্দর দেশ, উন্নত দেশ যে দেশটা হবে জাতির পিতা শেখ মুজিবের আত্মনির্ভরশীল আত্মমর্যাদাশীল উন্নত সমৃদ্ধ ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। ইনশাল্লাহ আমরা তা অর্জন করতে সক্ষম হবো।
মাসব্যাপী আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী-ক্রেতা-দর্শকদের মাঝে আমাদের সক্ষমতাকে আরও জোরালোভাবে পৌঁছে দেবে, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জোরদার হোক, এই মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য সফল হোক,প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমাদের মর্যাদা অর্জনে অধিষ্ঠিত হোক, এই কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বাণিজ্য মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার প্রান্তে মূল অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে