ঘুষ ছাড়া কাজ করেন না ‘বড় বাবু’
২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৪৫ | আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:৫৯
রাজবাড়ী: ঘুষ না দিলে কোনো কাজ করেন না রাজবাড়ী সদর উপজেলা ভূমি অফিসের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক বাবুল চন্দ্র সরকার। ভূমি অফিসে তিনি ‘বড় বাবু’ নামে পরিচিত। অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। নামজারি, মিসকেসসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ তার হয়রানির শিকার হন। তাকে ম্যানেজ না করলে মেলে না সমাধানের নিশ্চয়তা।
তার ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও সারাবাংলা’র হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, দু’জন বৃদ্ধ নামজারির একটি কাজে তার হাতে টাকা তুলে দিচ্ছেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন ভূমি অফিসের এক ‘দালাল’।
ভিডিওর শুরুতে ওই দালালের উদ্দেশে খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ‘বড় বাবু’কে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি এই সকাল বেলা কি পঁচা কামডা (কাজ) নিয়ে আইছো।’ পাশে থাকা লোকটি তখন বলেন, ‘না বাবু পঁচা না, এগুলো করে দিতে হবে। কোনো উপায় নাই।’ পরে এই কর্মকর্তা আরও কিছু টাকা দাবি করলে (শব্দ অস্পষ্ট) দালাল তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের এক ভুক্তভোগী বলেন, টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না ‘বড় বাবু’র দফতরে। একটি কাজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাকে ঘুরাচ্ছিলেন। পরে একটি মাধ্যমে আমাকে জানানো হয়, বড় বাবুকে ‘ম্যানেজ’ করলেই কাজটি হয়ে যাবে।
কয়েকজন ভুক্তভোগী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ভূমি অফিসে ‘বড় বাবু’ তৈরি করেছেন নিজস্ব দালাল সিন্ডিকেট। দালালদের মাধ্যমে বড় বাবুকে টাকা দিলে তবেই কাজের সমাধান মেলে। তা না হলে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। টাকা না দিলে তিনি ফাইল ফেলে রাখেন, ঝুলিয়ে রাখেন। অনেক সময় নানা অজুহাত দেখিয়ে এসি ল্যান্ড (সহকারী কমিশনার, ভূমি) স্যারের টেবিল পর্যন্ত ফাইল পৌঁছাতে দেন না।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সদর উপজেলা ভূমি অফিসের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক বাবুল চন্দ্র সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভিডিওটি আমার দফতরের। এগুলো রাখেন। নিউজ করার দরকার নাই।’
এদিকে, এসব অভিযোগের কথা এরই মধ্যে পৌঁছেছে জেলা প্রশাসনেও। বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) বাবুল চন্দ্র সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ নোটিশ) দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, অভিযুক্ত বাবুল চন্দ্র সরকারকে জেলা প্রশাসক শোকজ করেছেন। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আপাতত আমি বাবুল চন্দ্র সরকারকে দাফতরিক কাজ থেকে বিরত রেখেছি। অন্য কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে তার কাজগুলো করানো হবে।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, আমরাও অভিযোগ পেয়েছি। তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে অভিযুক্ত বাবুল চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/টিআর