Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেসিস নির্বাচনের আগে গণমাধ্যমে উড়ো মেইল!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:২৭ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২১:৪২

ঢাকা: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নির্বাচন ঘিরে এখন দেশের তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গন সরব। এর মধ্যেই আচমকা তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীরা পেয়েছেন দুইটি ইমেইল। একটি ইংরেজিতে, আরেকটি বাংলায়। দাবি করা হয়েছে, এগুলো এসেছে জিম্বাবুয়ে থেকে!

মেইলের বক্তব্য, জিম্বাবুয়ের একটি কোম্পানির সঙ্গে বেসিসের একটি সদস্য কোম্পানি কাজের জন্য চুক্তি করেও সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এ ধরনের নজির বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

বিজ্ঞাপন

মেইলে যে কোম্পানিকে অভিযুক্ত বলে দাবি করা হয়েছে, সেই কোম্পানির কর্ণধার এবার বেসিস নির্বাচনে পরিচালক পদে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনের দুই দিন আগে এমন ইমেইল হাজির হওয়ার বিষয়টিকে তাই কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দিতে পারছেন না কেউ। বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া ওই প্রার্থীকে চাপে রাখতেই এমন ‘উড়ো’ মেইলের আবির্ভাব। বিশেষ করে দুইটি মেইলের মধ্যে বাংলাটি গণমাধ্যমে প্রকাশের প্রায় উপযোগী আকারেই হাজির হয়েছে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে।

আরও পড়ুন- বেসিস নির্বাচনে তারুণ্যের হাতছানি

ওই মেইলে বলা হয়, ‘আমি নায়াশা ফ্রিম্যান, আমি বাংলাদেশের …. প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি অ্যাপ উন্নয়নের জন্য চুক্তি করি। তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অ্যাপটি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। ফলে আমরা চুক্তিটি বাতিল করি। আগাম পরিশোধ করা শতকরা ৫০ ভাগ অর্থও তারা ফেরত দেয়নি। এইরকম একটি অসৎ প্রতিষ্ঠানে যেন কেউ কাজ না দেন, সেজন্য আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

মেইলে বিভিন্ন ঘটনার দিন-তারিখের সঙ্গে আরও কিছু যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য রয়েছে। আছে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির ক্লায়েন্ট তালিকা, ‘হোয়াটসঅ্যাপ অডিও’ শিরোনামে একটি অডিও ফাইল, একটি ‘টার্মিনেশন লেটার’ এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সই করা চুক্তিপত্রের পিডিএফ কপি। এর মধ্যে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি ক্লায়েন্ট তালিকায় কিছু নাম লাল রঙে টাইপ করা। সেগুলোকে ভুয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে তালিকায়।

বিজ্ঞাপন

মেইলে যে তালিকা ও চুক্তি বাতিলের চিঠি পাঠানো হয়েছে, তা মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে টাইপ করা ফাইল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাইলে যে কারও পক্ষেই এটি তৈরি করা সম্ভব। আর হোয়াটসঅ্যাপ অডিও নামে যে অডিও ফাইলটি পাঠানো হয়েছে, সেটিও দু’জন ব্যক্তির ফোনালাপের রেকর্ড নয়, বরং একজন ব্যক্তির রেকর্ড করা অডিও ফাইল। মেইলে উল্লেখ করা বক্তব্যই স্বকণ্ঠে রেকর্ড করেছেন কেউ একজন। যে মেইল থেকেই ওই দু’টি ইমেইল এসেছে সেখানে ফিরতি মেইল করে প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি। যে নামে মেইল পাঠানো হয়েছে, অনলাইনে সার্চ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ব্যক্তির কোনো হদিসও পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন- তরুণ ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে আরও ভালো সেবা দেবো: হাবিবুল্লাহ এন করিম

গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোর ৩টা ২০ মিনিটে প্রথমে ইংরেজি ভাষায় মেইলটি পাঠানো হয়। ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে বিকেল ৩টা ১২ মিনিটে আসে বাংলায় লেখা মেইলটি। ‘এনওয়াই ডট ফ্রিম্যান অ্যাট দ্য রেট অব জিমেইল ডটকম’ ঠিকানা থেকে এসেছে মেইল দুইটি।

বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে একেবারেই মানতে নারাজ তথ্যপ্রযুক্তি ও আইআইজি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির। তিনি বলেন, কোনো দাফতরিক বিষয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানের ডোমেইন থেকে ইমেইল পাঠানোই রেওয়াজ। ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গেই ব্যক্তিগত সখ্যের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত কারণে যোগাযোগ করলে আমি জিমেইল সেবাই ব্যবহার করব। কিন্তু এরকম আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বেলায় যোগাযোগ অবশ্যই নিজের ডোমেইন থেকেই মেইল আসা উচিত।

যার নামে অভিযোগ, সারাবাংলাকে ওই ব্যক্তি একটি স্পষ্টীকরণ ব্যাখ্যাও পাঠিয়েছেন। ব্যাখ্যায় দাবি করা হয়, ‘এই চুক্তিটি হয়েছিল ২০২০ সালের দিকে। নির্বাচনের ঠিক একদিন আগে উড়ো মেইলের মাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে জিম্বাবুয়ে থেকে ওই মেইল পাঠানো হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। যেহেতু আগামীকাল বেসিস নির্বাচন, নির্বাচনকে টার্গেট করেই আমাকে হেয় করার জন্য এমন ভুয়া ও মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, বাংলা ইমেইল এসেছে জিম্বাবুয়ে থেকে। জিম্বাবুয়ে থেকে বাংলা ইমেইল আসা খুবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর এই বাংলাটি কোনো গুগল ট্রান্সলেটরের বাংলা নয়, খুব সুন্দর করে বাংলা লেখা হয়েছে এবং এর পেছনে বাংলাদেশের কেউ একজন সম্পৃক্ত।’

আরও পড়ুন- জবাবদিহিতার মাধ্যমে সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা করব: রাসেল টি আহেমদ

ওই ব্যক্তি বলেন, ‘চুক্তিটি হয়েছিল মালওয়ের সঙ্গে। ক্লায়েন্ট টাকা পাঠিয়েছিল মালওয়েতে। কোনো পর্যায়ে কোনো ধরনের কমিউনিকেশনে জিম্বাবুয়ে সম্পৃক্ত ছিল না। প্রশ্ন হচ্ছে— এখন জিম্বাবুয়ের প্রশ্ন কেন আসছে? কেনই বা জিম্বাবুয়ে থেকে ইমেইল এলো। প্রকৃতপক্ষে পুরো জিনিসটিই সাজানো এবং মিথ্যা অভিযোগ। এছাড়া বাংলাদেশের সাংবাদিকদের ইমেইল আইডি বাইরের দেশের আইটি খাতে সম্পৃক্ত মানুষ কীভাবে পেল? অনেক সাংবাদিকের ইমেইল আছে যেগুলো ৫ থেকে ৭ বছরের পুরোনো। সেই ইমেইলগুলোতেও মেইলটি পাঠানো হয়েছে। এটি খুবই পরিষ্কার— আমাকে হেয় করার জন্য এবং নির্বাচনের আগে আমাকে চাপে রাখার জন্য এই কাজটি করা হচ্ছে। এখানে দেশের সফটওয়্যার খাতেরই কেউ সম্পৃক্ত। আমাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখতে, নির্বাচনি কাজে বাধা তৈরি করতে এমন অভিযোগ বাজারে ছাড়ানো হয়েছে।’

চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এই উদ্যোক্তা বলেন, গত বছরের এপ্রিলে ৯ হাজার ৩০০ ডলারের চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ৫০ শতাংশ অর্থ সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গ্রাহক পেমেন্ট করেছিল জুলাই মাসের শেষের দিকে। ১০ দিন পর ভারতীয় একটি কোম্পানি থেকে তারা ২ হাজার ডলারে কাজটির অফায় পায়। তখন তারা বলতে শুরু করে, তোমরা বেশি প্রাইসে কোটেশন দিয়েছ। এক পর্যায়ে তারা চুক্তি বাতিল করতে বলে। অগ্রিম টাকাও ফেরত দিতে বলে। কিন্তু ততক্ষণে আমরা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলেছি। তাছাড়া চুক্তিপত্রেও চুক্তি বাতিলের ক্ষেত্রে অগ্রিম টাকা ফেরত দেওয়ার কথা উল্লেখ করা ছিল না। ফলে আমাদের নামে যা কিছু বলা হচ্ছে, সেটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে নির্বাচনের আগে ইস্যু বানিয়ে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছে বিরোধীপক্ষ।’

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন একজন সাংবাদিক। তারও ভাষ্য, জিম্বাবুয়ে থেকে বাংলায় মেইল আসার কথা নয়। নির্বাচনের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মেইলটি পাঠানো হয়ে থাকতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযুক্ত প্রার্থীর নির্বাচনি প্যানেলের একাধিক প্রার্থী বলছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওই ব্যক্তিকে হেয় করার জন্য কেউ এই কাজটি করেছেন বলে তাদের ধারণা। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল থেকে সারাবাংলাকে জানানো হয়েছে, তারা একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচনে বিশ্বাসী। এ ধরনের কাজের সঙ্গে তাদের কেউ সম্পৃক্ত নন।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

উড়ো মেইল টপ নিউজ বেসিস নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর