লঞ্চে আগুন: বার্নে ভর্তি দু’জন আইসিইউতে, বাকিরাও শঙ্কামুক্ত নন
২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:১৯ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:১৯
ঢাকা: ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের আগুনে দগ্ধ দু’জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি বাকিদের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের কারও অবস্থাই আশঙ্কামুক্ত নয়।
শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধদের চিকিৎসা বিষয়ে ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, এখন পর্যন্ত যারা এখানে ভর্তি আছেন, তাদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তাদের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের পোস্ট অপারেটিভসহ অন্যান্য ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তাদের সবারই শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে।
আরও পড়ুন-
লঞ্চে আগুন: দগ্ধ আরও এক জনের মৃত্যু
লঞ্চে আগুন: বরগুনায় গণকবরে ৩০ জনকে দাফন
আগুন লাগার পরও নদীতে এক ঘণ্টা চলেছিল লঞ্চটি
লঞ্চের আগুনে দগ্ধ স্বজনদের দেখতে গিয়ে প্রাণ গেল ২ জনের
লঞ্চে আগুন: ৪০ জনের মরদেহ হস্তান্তর, ৪ জনের পরিচয় শনাক্ত
শেবাচিম হাসপাতালে বন্ধ বার্ন ইউনিট, দগ্ধদের চিকিৎসা সার্জারিতে
‘বউ আর ৩টা বাচ্চা বেঁচে আছে না মরে গেছে, তাও বলতে পারছি না’
লঞ্চে আগুন: নানীর মৃত্যুর খবরে বাড়িতে, ফেরার পথে হারালেন মেয়েকে
বার্ন ইনস্টিটিউটের এই সমন্বয়ক বলেন, লঞ্চের আগুনে দগ্ধ আরও ৩২ জন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য গতকালই (শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর) বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে একটি চিকিৎসক দলকে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামও তারা নিয়ে গেছেন। আশা করা যায়, সেখানে চিকিৎসার কোনো ঘাটতি হবে না।
বার্ন ইনস্টিটিউটে যেসব দগ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, তাদের তথ্য জানিয়ে ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. এস এম আইউব হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত লঞ্চ দুর্ঘটনার শিকার ২১ জন রোগীকে আমরা বার্ন ইনস্টিটিউটে পেয়েছি। তাদের মধ্যে হাবীব খান (৪৫) নামে একজন রাতে মারা গেছেন।
ডা. আইউব বলেন, দগ্ধ আরও ১৫ জনকে এখানে ভর্তি রাখা হয়েছে। আর বিকাশ মজুমদার (১৬) নামে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মিলন (৩৮) নামে আরও একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার পিঠের হাড় ভেঙে গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট থেকে বরগুনার পথে ছেড়ে যায় এমভি অভিযান-১০। দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর গাবখান ধানসিঁড়ি এলাকায় লঞ্চটিতে আগুন লাগে।
শুক্রবার পর্যন্ত লঞ্চ থেকে ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর দগ্ধ কমপক্ষে ৯০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের দেখতে গিয়েই বরিশালে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা থেকে চিকিৎসক দল ও সরঞ্জাম পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন।
এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এরই মধ্যে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যুগ্মসচিব তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। আর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সাইফুল ইসলামকে কমিটির প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
সারাবংলা/এসএসআর/টিআর