গরিবের জন্য ভ্যাকসিনই নেই, ধনীর জন্য বুস্টার
২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:০৬ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:১৯
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, প্রতিদিন বিশ্বের মোট করোনা ভ্যাকসিনের ২০ শতাংশ বুস্টার ডোজ হিসেবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। তার মানে, প্রতি পাঁচ ডোজ ভ্যাকসিনের এক ডোজ চলে যাচ্ছে বুস্টার ডোজ হিসেবে।
এর আগে, ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, বিশ্বের অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ করে ভ্যাকসিন পাওয়ার আগে যেন বুস্টার ডোজ প্রয়োগ শুরু না করা হয়। ফের সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এখনও আফ্রিকার চার জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে তিন জনই ভ্যাকসিনের আওতায় আসেননি।
বিশ্ব স্বাস্থ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বেশ কিছুদিন ধরেই ভ্যাকসিন কর্মসূচিতে বৈষম্য নিয়ে সোচ্চার। তাদের যুক্তি, করোনাকে কিছু অঞ্চলে ঐচ্ছিকভাবে ছড়ানোর সুযোগ দিলে নতুন ও আরও মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং গ্লোবাল চেঞ্জ ডাটা ল্যাবের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৫৭ শতাংশ মানুষ অন্তত এক ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন। কিন্তু, তাদের মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশে বাস করা মাত্র ৮.১ শতাংশ মানুষ রয়েছেন।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রে এমন বৈষম্যের মধ্যেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে ধনী দেশগুলো ব্যাপকহারে বুস্টার ডোজ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুসারে এখন পর্যন্ত ১২০টির বেশি দেশ বুস্টার ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছে। যাদের সবাই ধনী দেশ।
এদিকে, ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (এমা) জানিয়েছে, বাজারে থাকা ভ্যাকসিনগুলো ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ঠিক কতটা কার্যকর তা স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে, ওমিক্রন মোকাবিলায় প্রচলিত ভ্যাকসিনের ঘাটতি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সংস্থার ভ্যাকসিন স্ট্র্যাটেজি বিভাগের প্রধান মার্কো কাভেলারি। বুস্টার ডোজ সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারছে বলেও জানান তিনি।
বায়োনটেক ও ফাইজারের এক গবেষণা বলছে, তাদের তিন ডোজ ভ্যাকসিন ওমিক্রন মোকাবিলায় সক্ষম। আর দুই ডোজ ভ্যাকসিন মারাত্মক সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাবে।
উন্নত দেশগুলোতে ক্রমে বুস্টার বাধ্যতামূলক হচ্ছে। ভবিষ্যতে ইউরোপ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বুস্টার ডোজ বাধ্যতামূলক করার ইঙ্গিত দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। ২০২২ সালের ১ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে এই নতুন নিয়ম চালু করতে চায় তারা। অবশ্য এই নিয়ম কার্যকর করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
ফ্রান্স বলছে, প্রাপ্তবয়স্করা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সাত মাসের মধ্যে আরেকটি ডোজ না নিলে তাদের কোভিড সার্টিফিকেট অকার্যকর হয়ে যাবে। ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে এই নিয়ম চালু করবে ফ্রান্স।
পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো এবং ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বুস্টার ডোজ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষও স্বাস্থ্য, বয়স্ককেন্দ্র, কোয়ারানটাইন সেন্টার ও মাইনিংসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করা ১০ লাখের বেশি কর্মীর জন্য বুস্টার ডোজ বাধ্যতামূলক করেছে৷
তবে, করোনা ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ প্রয়োগে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে ইসরাইল। ইতোমধ্যে ওমিক্রনের প্রভাব কমাতে স্বাস্থ্যকর্মী ও ষাটোর্ধ্বদের দ্বিতীয় ডোজ বুস্টার (চতুর্থ ডোজ ভ্যাকসিন) দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, ভবিষ্যতে কি বুস্টার ডোজ নেওয়া কি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি মনে করছেন, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ ডোজের পর শরীরে হয়ত এমন সুরক্ষা তৈরি হবে যার মাধ্যমে করোনা সাধারণ সর্দি-কাশিতে পরিণত হবে।
সারাবাংলা/একেএম