লঞ্চে আগুন: লাশের খোঁজে নদীতে স্বজনরা
২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:৪৩ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৪১
বরিশাল: সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড। নারী ও শিশুসহ বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন ৭২ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার বার্ন ইনস্টিটিউটে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।
দুর্ঘটনার সময় ওই লঞ্চে ছিলেন কিন্তু এখনও যাদের সন্ধান মেলেনি তেমন অন্তত ৩৬ জনের পরিবারের সদস্যরা স্বজনদের লাশের সন্ধানে শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ঝালকাঠি মিনিপার্ক থেকে ট্রলার যোগে সুগন্ধা নদীতে বেরিয়েছেন।
স্বজনের সন্ধানে থাকা এম এ জলিল বলেন, তার ভাইয়ের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা শিশু সন্তান নুসরাতকে নিয়ে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। কিন্তু, আগুনের ঘটনার পর আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে বরগুনার পরীরখাল থেকে তার মতো আরও কয়েকজন মিলে নদী বেরিয়েছেন। কিন্তু, এখনও তাদের স্বজনদের সন্ধান মেলেনি।
তিনি বলেন, শুক্রবার সারাদিন তারা ঝালকাঠি অংশের নদী আর পুড়ে যাওয়া লঞ্চেড় মধ্যে স্বজনদের খুঁজেছেন। কিন্তু, কোনো সন্ধান পাননি। তাই, বাধ্য হয়ে এখন ট্রলার নিয়ে খুঁজতে বেরিয়েছেন। যদি কোথাও স্বজনের মরদেহ ভেসে ওঠে সেই আশায় সন্ধান চালিয়ে যাবেন।
সোহরাব হোসেন নামের আরেক স্বজন বলেন, সারারাত তারা ঝালকাঠি টেকনিকেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশের নদী তীরে বসেছিলেন। সেখানে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতারা তাদেরকে খাবার আর কম্বল দিয়েছে। কিন্তু, তাদের স্বজন তো ফেরত আসেনি। এখন তাই বাধ্য হয়ে নদীতে নেমেছেন।
এদিকে, ওই আগুনের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া লঞ্চ যাত্রী গীতা রানী বলেন, আগুন লাগার ঠিক আগে তার বড় ছেলে স্বপ্নীল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে লঞ্চের টয়লেটে যায়। একটু পরই ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দ হয়। পুরো লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ডেকের লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে। তখন বড়-ছোট দুই ছেলেকেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। লোকজনের ধাক্কায় কীভাবে লঞ্চের বাইরে নেমেছেন তাও বলতে পারছেন না। কয়েক ঘণ্টা পর ছোট ছেলে প্রত্যয়কে খুঁজে পেলেও বড় ছেলে উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র স্বপ্নীলকে এখনও পাওয়া যায়নি।
গীতা রানী বলেন, হারানো ছেলেকে পুড়ে যাওয়া লঞ্চে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে খুঁজে না পেয়ে এখন নদীতে খুঁজতে এসেছেন।
তিনি বলেন, তার ছেলে পুড়ে মারা গেছে নাকি পানিতে ডুবে মারা গেছে জানেন না। অন্তত লাশটা বাড়িতে নিতে চান। এজন্য যতদিন লাগে ততদিন নদীর পাড়ে অপেক্ষা করবেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে। পরে ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় লঞ্চটি ভেড়ানো হয়। আগুন লাগার পর যাত্রীরা নেভানোর চেষ্টা করেন। অনেকে ছাদে চলে যান। কেউ কেউ নদীতে লাফ দেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়ও, দগ্ধ অবস্থায় দেড় শতাধিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সারাবাংলা/একেএম