ঘুম ভেঙে কয়েকশ যাত্রী দেখলেন— মরতে হবে ডুবে, নয়তো আগুনে
২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১০:৫০ | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৫৩
শীতের রাত। কাঁথা-কম্বল মুড়িয়ে ঘুমের দেশে লঞ্চের কয়েকশ যাত্রী। হঠাৎ আগুন আগুন আর্তচিৎকারে ঘুম ভেঙে বেশিরভাগ যাত্রী দেখলেন তাদের জন্য খোলা পথ মাত্র দুটি; হয় আগুনে পুড়ে মরতে হবে নয়তবা নদীতে ডুবে। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত তিনটার দিকে এমনই এক কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে পড়তে হলো বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের যাত্রীদের।
সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর দগ্ধ ৭০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন উদ্ধারকাজে সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোররাতে সুগন্ধা নদীর গাবখান ধানসিঁড়ি এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমরা আগুনের খবর পাই। সুগন্ধা নদীর মাঝামাঝি স্থানে এই ঘটনা ঘটে। আগুন মুহূর্তে পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। লঞ্চের এমন কোনো জায়গা খালী ছিল না, যেখানে গিয়ে আত্মরক্ষা করতে পারেন যাত্রীরা।
আরও পড়ুন- লঞ্চে আগুন: সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
সকাল নয়টার দিকে ঝালকাঠির ডিসি মো. জোহর আলী জানান, দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চ থেকে ৩০ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ৭০ জনকে দগ্ধ অবস্থায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লঞ্চে চার শতাধিক যাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে।
লঞ্চের যাত্রী আউয়াল হোসেন বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দে লঞ্চে আগুন ধরে যায়। লঞ্চের পেছনের অংশ থেকে তৃতীয় তলার সামনে পর্যন্ত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই লঞ্চ থেকে নদীতে লাফ দেন। অনেকেই সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছেন। অনেকে হয়তো পারেননি।
কেবিনের যাত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পোড়া গন্ধ পেয়ে আমি কেবিন থেকে বেড়িয়ে এসে দেখি লঞ্চে আগুন লেগেছে। তখন আমার স্ত্রী, শ্যালক নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রচন্ড ঠান্ডায় নদী সাঁতরে তীরে উঠেছি। লঞ্চের কোনো অংশ পোড়ার বাকি নেই।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা সদরঘাট থেকে বরগুনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় অভিযান-১০। রাত তিনটার দিকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
লঞ্চ থেকে জীবিত উদ্ধার যাত্রীরা ধারণা করছেন, ইঞ্জিনের পার্শ্ববর্তী রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
আরও পড়ুন-
মাঝনদীতে লঞ্চে ভয়াবহ আগুন, ১৬ জনের লাশ উদ্ধার
সারাবাংলা/এএম