খালেদা ইস্যুতে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঢাকায় ‘সফল’, জেলায় শুরু
২২ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:২৬ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:৪৯
ঢাকা: গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে টানা একমাসের অধিক সময় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। সারাদেশে গণ-অনশন, মানববন্ধন, সমাবেশসহ জেলা প্রশাসকদের স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সরকারের ‘বাধাহীন মনোভাবের’ বিষয়টাকে ‘প্রাথমিক সাফল্য’ হিসেবে দেখছে দলটি।
এই সাফল্যকে ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়ে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে ৩২ জেলায় সমাবেশ কর্মসূচি শুরু করছে বিএনপি। ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্বের কর্মসূচি। এরপর পরিস্থিতি বুঝে ট্রেন মার্চ ও লংমার্চ কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন- খালেদা জিয়া ইস্যুতে বিএনপির চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচি সমর্থন করছে সাধারণ মানুষ। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশে চিকিৎসা ইস্যুতে সরকারের অনমনীয় মনোভাব কেউ ভালোভাবে নিচ্ছে না। তার চিকিৎসার ব্যাপারে একদিকে মানুষের সহানুভূতি তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারের প্রতি ক্ষোভ ও বিরক্তি বাড়ছে। এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে ফের মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে তারা।
এরই অংশ হিসেবে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) ধারাবাহিকভাবে ৩২ জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি শুরু করছে বিএনপি। এসব কর্মসূচি ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে ২২, ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর বিভিন্ন বিভাগের জেলা সদরে প্রতিদিন ৬টি করে সমাবেশ হবে। আর ২৮ ও ৩০ ডিসেম্বর প্রতিদিন ৭টি করে সমাবেশ হবে জেলা পর্যায়ে।
প্রথম দিনে ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইলে, খুলনা বিভাগের যশোরে, রংপুর বিভাগের দিনাজপুরে, রাজশাহী বিভাগের বগুড়ায়, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সমাবেশ হবে। এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইলের সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি থাকবেন। হবিগঞ্জের সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বগুড়ার সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দিনাজপুরে নজরুল ইসলাম খান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমাবেশে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি থাকবেন।
এ ছাড়া ২৪ ডিসেম্বর গাজীপুরের সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জয়পুরহাটে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জামালপুরে নজরুল ইসলাম খান, নোয়াখালীতে আবদুল্লাহ আল নোমান ও ভোলায় মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আমাদের আন্দোলনে দেশবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন প্রমাণ করে বিএনপির দাবি যৌক্তিক- আমাদের সার্থকতা এখানেই। আমরা এখানেই থামতে চাই না। আজ থেকে জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হবে।
গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে গত ১৩ নভেম্বর থেকে এভাকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে চিকিৎসা দিচ্ছে। প্রথমে কেবিনে রাখা হলেও এখন তিনি সিসিইউতে।
এর আগে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এ বছর এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত টানা ৫৪ দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছর ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ তাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। তখন থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজা’য় রয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেছে তার পরিবার। কিন্তু সরকার সেই আবেদন আমলে নেয়নি। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হলো- সাময়িক মুক্তির শর্ত অনুযায়ী তাকে দেশে রেখেই চিকিৎসা দিতে হবে। বিদেশে যেতে হলে কারাগারে ফিরে আবেদন করতে হবে।
সারাবাংলা/এজেড/এএম