ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অপসারণ, বিক্ষোভে বাসিন্দারা
২১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৭:৫০ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে হেলে পড়া ভবনসহ আশপাশের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণ শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তবে ক্ষতিপূরণ ছাড়া ভবন অপসারণের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারানো হেলে পড়া ভবনটির বাসিন্দারাও বিক্ষোভে অংশ নেন।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১টার দিকে নগরীর সদরঘাট থানার মাঝিরঘাট স্ট্যান্ড রোডের জনতা ব্যাংকের সামনে সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। তারা প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এসময় ওই এলাকায় ব্যাপক যানজট দেখা দেয়।
ঘটনাস্থলে থাকা সদরঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রনি তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘হেলে পড়া ভবনটির কিছু অংশ অপসারণের কাজ শুরুর পর লোকজন রাস্তায় নেমে এসেছিল। ভবন থেকে যাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তারাও এসেছিলেন। পরে আমরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিই। বিকেল ৩টার দিকে তারা চলে যান।’
আরও পড়ুন- খাল খননে ঝুঁকিতে একাধিক স্থাপনা, হেলে পড়েছে ভবন
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে মাঝিরঘাট স্ট্যান্ড সড়কে পার্বতী ফকিরপাড়া এলাকায় গুলজার খাল সংলগ্ন একটি তিন তলা ভবন হেলে পড়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের টিম। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই এলাকায় তিন তলা ভবন ছাড়াও একটি দোতলা মন্দির এবং একটি সেমিপাকা কলোনি কিছুটা হেলে গেছে। সেগুলোর দেওয়ালে ও মেঝেতে ফাটল পাওয়া গেছে। একই সারিতে আরও অন্তঃত তিনটি ভবন, একটি পাকা মন্দির এবং ১০টি কাঁচা ঘর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ভবনগুলো পরিদর্শনে যান সিডিএর কর্মকর্তারা। এসময় জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও ছিলেন। তারা ভবনগুলোর ঝুঁকি কমাতে অপসারণ শুরু করেন।
সিডিএর অথরাইজড অফিসার মো. হাসান বলেন, ‘ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সেগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে কিছু অংশ অপসারণ করা হচ্ছে। এরপর ভবনগুলো সিলগালা করে ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হবে।’
এদিকে ভবন ভাঙতে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয় লোকজন। তারা সিডিএর কর্মকর্তাদের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। সিডিএ কর্মকর্তাদের কাছে কোনো আশ্বাস না পেয়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত আরতি দাশ বলেন, ‘কোনো নোটিশ ছাড়া সময় না দিয়ে ঘর ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গত (সোমবার) রাতে হঠাৎ করে এসে আমাদের ঘর থেকে বের করে দেওয় হয়। শীতের মধ্যে সারারাত খোলা আকাশের নিচে থেকেছি। এখন ঘরই ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমরা কোথায় যাব?’
হেলে পড়া ভবনের মালিক সুশান্ত দাশ বলেন, ‘অনুমোদন নিয়েই ভবন করেছি। ঋণ নিয়ে ভবন করেছিলাম দুই বছর আগে। এখন হঠাৎ এসে ভবন ভেঙে দিচ্ছে। আমাদের ভবনে ১০টি পরিবার থাকে, তারা কোথায় যাবে? আমরা পরিবার নিয়ে কোথায় যাব?’
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক ও সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে তিন তলা ভবনটি হেলে পড়েছে, এর কিছু অংশ ২০১৯ সালে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তখনই বলা হয়েছিল, মালিকপক্ষ যেন বাসিন্দাদের সরিয়ে ভবনটি অপসারণ করে। কারণ এর ভিত্তি খুব দুর্বল। খাল থেকে মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হলে ভবনটি টিকবে না। তারা কথা শোনেনি। এখন খাল খননের কাজ শুরুর পর স্বাভাবিকভাবেই সেটি হেলে পড়েছে।’
গুলজার খাল সংলগ্ন আরও পাঁচ-ছয়টি স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খালের দেওয়াল আর ভবনগুলোর দেওয়াল প্রায় একসঙ্গে। এভাবে খাল ঘেঁষে স্থাপনা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। ভবনগুলো নির্মাণে সিডিএর কোনো অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। এখন সিডিএ সেগুলো লাল তালিকাভুক্ত করে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সারাবাংলা/আরডি/টিআর