Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সত্য ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে সরকার: নজরুল ইসলাম খান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:০৮

ঢাকা: সরকার জনগণকে সত্য ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধনকালে তিনি এ অভিযোগ করেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উপ-কমিটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে যিনি প্রথম বলেছিলেন, উই রিভোল্ট সেই মানুষটির নাম মেজর জিয়াউর রহমান। আমরা বিদ্রোহ করলাম বলে তিনি তার ইউনিটে ফিরে যান, তার কমান্ডার পাঞ্জাবি অফিসারকে বন্দি করেন, হত্যা করেন এবং তার (জিয়াউর রহমান) কণ্ঠেই প্রথম আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছি রেডিওতে।’

‘কেউ এখন আইন করে কিংবা কোনো আদালত রায় দিয়ে যদি আমাকে বলে যে, তুমি নিজের কানে যা শুনেছো সেটা বিশ্বাস করো না। আমি কী করে তা মানব?” এমন প্রশ্ন তুলে নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন,  “আমি তো কারো কাছ থেকে শোনা কথা বলছি না। আমি আমার নিজের কানে শোনা কথা বিশ্বাস করব না? কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসের সত্য ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমি বলব, অপচেষ্টা হচ্ছে। দেশকে এই ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত করতে হবে। যার যা প্রাপ্য সেটা তাকে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম সেটি একদিনের প্রস্তুতি না। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অনেক সংগ্রাম-আন্দোলনে মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতার সংগ্রামে পৌঁছেছি, স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি। এই সময়গুলোতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা সবাই আমাদের শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৭০ এর নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছিলেন এবং গণতন্ত্রের স্বাভাবিক নিয়মে যাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার কথা তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলেই তো আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছিল। গণতন্ত্রের জন্য, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য সে সময়ে যারা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরও আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে, তারাও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য।’

বিজ্ঞাপন

‘কারণ, সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি ক্ষেত্র প্রস্তুত না করত, তাহলে তো যুদ্ধে করে আমরা জনগণের সমর্থন পেয়ে বিজয়ী হতে পারতাম না। সেই সময়ে সারা দুনিয়ার যারাই আমাদের সহযোগিতা করেছে, সমর্থন জানিয়েছে তারা সবাই আমাদের শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। সেই সময় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছে, এমনকি যারা কিছু করতে পারেন নাই আমাদের জন্য দোয়া করেছেন তাদের কাছেও আমাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে। কিন্তু কাউকে কোনো মর্যাদা না দিয়ে, কারও প্রতি কোনো কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে শুধুই যদি আমরা কেউ নিজেরা এই গৌরবকে দখল করতে চাই, এটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, এটা অন্যায়’— বলেন নজরুল ইসলাম খান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে এই মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময় আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতি, স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, স্বাধীন বাংলাদেশের যে প্রথম সরকার সেই সরকারের যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীসহ সব সেক্টর কমান্ডার, ফোর্সেস কমান্ডার, সাব সেক্টার কমান্ডার, যারা সৈনিক ছিলেন, যারা সহযোগী ছিলেন, যারা সাহায্য করেছেন এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা, যুদ্ধে আমার যেসব মা-বোনেরা তাদের সারাজীবনের সর্বোচ্চ সম্পদ হারিয়েছেন, যে সন্তানরা তাদের মা-বাবা-ভাই-বোনকে হারিয়েছেন, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১৯৭১ সালে বেগম খালেদা জিয়াসহ তার দুই সন্তানকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কারাগারের মাসের পর মাস কাটাতে হয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা। তাদের প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধা। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য আমাদের, যিনি ’৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর কারাগারে দুই সন্তানসহ বন্দিজীবন কাটিয়েছেন আজকে আবার এই সরকারের আমলে মিথ্যা অভিযোগ কারারুদ্ধ হয়ে থাকতে হচ্ছে দারুণ অসুস্থ অবস্থায়।’

চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে অর্ধশতাধিক শিশু-কিশোর অংশ নেয়। তারা সাদা কাগজে নানা রঙ দিয়ে ‘আমার মা, আমার দেশ, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, ধানের শীষ, মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ মিনার, খাল-খনন, সবুজ গ্রাম’ প্রভৃতি আঁকে।

শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘তোমরা সত্য জানার চেষ্টা কর। মনে রাখবে জ্ঞান তাই যা সত্য। মিথ্যা জানা জ্ঞান নয়। যারা মিথ্যা জানাতে চায় তারা আমাদের অজ্ঞানতার অভিশাপে আবদ্ধ করতে চায়।’

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটির আহ্বায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কবি আবদুল হাই শিকদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মীর নেওয়াজ আলী, সেলিম রেজা হাবিব, মেজবাহ আহমেদ, আবদুল বারী ড্যানি, আমিনুল ইসলাম, আবেদ রাজা, খান রবিউল ইসলাম রবি, ফরিদা ইয়াসমীন, মহসিন মন্টু, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, রীতা আলী প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/আইই

টপ নিউজ নজরুল ইসলাম খান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর