Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিচারপতি নিয়োগে আইন প্রণয়ন অপরিহার্য: প্রধান বিচারপতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:২৩

ঢাকা: বিদায়ী সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগসংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা বাস্তবতার নিরিখে অপরিহার্য। এতে বিচারপতি নিয়োগের কাজ আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর হবে। জনগণের মধ্যে বিচারপতি নিয়োগের স্বচ্ছতা সম্পর্কে ভিত্তিহীন ধারণা দূরীভূত হবে।

বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) বিচারিক কর্মজীবনের শেষ দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনার জবাবে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এমন মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রের তিনটি (আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ) অঙ্গের দায়িত্ব এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে বিধৃত রয়েছে। তিনটি অঙ্গের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই গণতন্ত্রকে বিকশিত করে। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এটা আমাদের সংবিধানের সৌন্দর্য।’

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থার অন্তর্নিহিত শক্তির উৎস হলো জনগণের আস্থা। এটি হলো বিচারকদের সততা, সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি গণমানুষের অবিচল বিশ্বাস। সাধারণ মানুষের এই আস্থা অর্জনের জন্য বিচারকদের একদিকে যেমন উঁচু নৈতিক মূল্যবোধ ও চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, তেমনি সদা বিকাশমান ও পরিবর্তনশীল আইন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও সামাজিক মূল্যবোধ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এটা অর্জন সম্ভব কেবলমাত্র নিয়মিত অধ্যয়ন ও সময়মতো আইনানুগভাবে বিচারিক কাজ সম্পন্নকরণের মাধ্যমে।’

‘এ কথা অনস্বীকার্য যে, মামলার সংখ্যা বিবেচনায় আমাদের বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল। মামলার জট নিরসনে দেশের অধস্তন আদালত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত বিচারকের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। জেনে খুশি হয়েছি যে, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের পক্ষ্যে সরকার কাজ শুরু করেছে। সংবিধানের আলোকে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা বাস্তবতার নিরীখে অপরিহার্য। এতে বিচারপতি নিয়োগের কাজটি আরও স্বচ্ছ ও দ্রুততর হবে এবং জনগণের মধ্যে বিচারপতি নিয়োগের স্বচ্ছতা সম্পর্কে ভিত্তিহীন ধারণা দূরীভূত হবে।’

বিজ্ঞাপন

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদালত কক্ষে আয়োজিত জনাকীর্ণ এই সংবর্ধনায় উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ, আ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা বক্তব্য রাখেন। নিজেদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ এনে প্রধান বিচারপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন বারের সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বারের কার্যনির্বাহী কমিটির ছয়জন সদস্য। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাবেন আগামী ৩১ ডিসেম্বর। এর মধ্যে শীতকালীন অবকাশ শুরু হওয়ায় বুধবার তার শেষ কর্ম দিবস। এ কারণে আজকেই তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তার পিতা সৈয়দ মোস্তফা আলী ছিলেন একজন আইনজীবী। কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক সরকারি কৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আর মা বেগম কাওসার হাসান ছিলেন গৃহিণী।

সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের শিক্ষাজীবনের কেটেছে কুমিল্লা শহরে। কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ১৯৭২ সালে সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষা এবং একই কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

পরে ১৯৮০ সনে কুমিল্লা আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৮১ সালে আইনজীবী হিসেবে জেলা বারের সনদপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হন। ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

এরপর ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

বয়সসীমা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দায়িত্বপালন করবেন ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির কারণে আজকেই আপিল বিভাগের শেষ বিচারিক কর্মদিবসেই প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

টপ নিউজ প্রধান বিচারপতি বিচারপতি নিয়োগ আইন

বিজ্ঞাপন

‘আরও কঠিন পথ পারি দিতে হবে’
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২২:৫৬

আরো

সম্পর্কিত খবর