Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সড়কে নিরাপত্তায় দেশে জাতিসংঘ স্বীকৃত হেলমেট অবমুক্ত

সারাবাংলা ডেস্ক
৯ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:৩৬ | আপডেট: ৯ ডিসেম্বর ২০২১ ২০:৪১

সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ক্রমবর্ধমান। এসব দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর প্রাণহানির ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে পারে উপযুক্ত হেলমেট। এমন হেলমেট ব্যবহারের উচ্চ মানদণ্ড নির্ণয় ও সচেতনতা বাড়াতে দেশে অবমুক্ত করা হলো বিশ্ব মোটর স্পোর্টসের পরিচালনা সংস্থা ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি অটোমোবাইলের (এফআইএ) তৈরি এবং জাতিসংঘের স্বীকৃত মোটরসাইকেল আরোহীর হেলমেট।

বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিশ্বব্যাংক, এফআইএ, ব্র্যাক ও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আয়োজিত ঢাকায় সড়কে নিরাপত্তায় হেলমেটের ব্যবহার শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই হেলমেট অবমুক্ত করা হয়েছে। ব্র্যাক থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই বিশেষ হেলমেট জাতিসংঘের বিশেষ নিরাপত্তা স্পেসিফিকেশনে তৈরি এবং স্থানীয় আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, সরকারি সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সড়ক নিরাপত্তা প্রচার অভিযানে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে ১২ জন নির্বাচিত মোটরসাইকেলচালক ও অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যে জাতিসংঘ স্বীকৃত হেলমেট তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর সারাবিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ লাখের বেশি মানুষ মারা যান। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় যানবাহনের সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ হলেও এখানে সড়কে মৃত্যুর হার সারাবিশ্বের মোট সংখ্যার ২৫ শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশে নিবন্ধন করা যানবাহনের ৬০ শতাংশই মোটরসাইকেল। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা এ বছরের প্রথম ১০ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য উদ্ধৃত করে অনুষ্ঠানে বলা হয়, হেলমেট ব্যবহারের ফলে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে ৪২ শতাংশ এবং মারত্মক আহত হওয়ার ঝুঁকি কমে ৬৮ শতাংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতেই উপযুক্ত মানের হেলমেট ব্যবহারে উৎসাহিত করতে জাতিসংঘ স্বীকৃত হেলমেট অবমুক্ত করা হয় অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুযায়ী মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীর যথাযথভাবে হেলমেট পড়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখানে যথাযথ মান স্পষ্ট করা হয়নি। বর্তমানে বাজারে যেসব হেলমেট পাওয়া যায় তার মান বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিবেচনার সুযোগ নেই। হেলমেটের ব্যবহার আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে অনুষ্ঠানে অবমুক্ত করা জাতিসংঘ স্বীকৃত হেলমেট রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, যেহেতু হেলমেটের ব্যবহার জীবন ও মৃত্যুর প্রশ্ন, সেহেতু আমাদের নিম্ন মানের হেলমেট আমদানি বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজন হলে এখানে নীতিমালা সংশোধন করতে হবে। নীতিমালা না থাকলে নীতিমালা করে নিম্নমানের হেলমেটের আমদানি বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে দেশেই মানসম্মত হেলমেট তৈরিতে কীভাবে সহযোগিতা দেওয়া যায়, সে বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে হবে।

গত ছয় মাসের সড়ক নিরাপত্তার বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেন, ৩২ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনাতেই মোটরসাইকেলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এখানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো হেলমেটের মান নিশ্চিত করা। আমাদের নিম্নমানের হেলমেট আমদানি বন্ধ করতে হবে। আমি আমাদের মোটরসাইকেল উৎপাদকদের সহযোগিতা চাই, যেন কেউ মোটরসাইকেল কিনলেই তাকে প্যাকেজ আকারে একটি স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট সঙ্গে দিয়ে দেওয়া যায়। এতে মানসম্মত হেলমেটের ব্যবহার নিশ্চিত হবে।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, মোটরসাইকেল হেলমেটের মান নির্ধারণে বিআরটিএ কাজ করছে। সড়কে মোটরসাইকেলে মৃত্যু কমিয়ে আনতে স্ট্যান্ডার্ড হেলমেট ব্যবহারের বিকল্প নেই। আমরা এরই মধ্যে বিএসটিআইয়ের কাছে হেলমেটের মান নির্ধারণে অনুরোধ করেছি এবং এ বিষয়ে কাজ চলছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শ্যাফার বলেন, সড়কে নিরাপত্তার সংকট এখন বৈশ্বিক মহামারি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশ পথচারী, সাইকেলচালক বা মোটরসাইকেলচালক। সড়ক দুর্ঘটনা যেমন মেনে নেওয়া যায় না, তেমন এর প্রতিকারও সম্ভব। এখানে রয়েছে সাধারণ সমাধান। যেমন— মানসম্মত হেলমেটের ব্যবহারে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর ৩৯ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমে আসে। জীবন বাঁচাতে ইউএন স্ট্যান্ডার্ড হেলমেটের ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা এবং এর প্রচারে বাংলাদেশ সরকার, ব্র্যাক, এফআইএ’র সঙ্গে অংশিদারিত্ব করতে পেরে বিশ্বব্যাংক গর্বিত।

বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, নিরাপদ হেলমেটের ব্যবহারে জীবন বাঁচে, ঝুঁকি কমে— এমন সাধারণ এবং কম খরচে সমাধান নিয়ে আমরা আশাবাদী। জাতিসংঘ স্বীকৃত এই হেলমেট স্থানীয়ভাবে তৈরি সম্ভব। এর খরচ পড়বে মাত্র ১ হাজার ৫০ টাকা। তবে এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য। জাতিসংঘ স্বীকৃত এই হেলমেট জীবন বাঁচায় এবং সড়ক নিরাপত্তা বাড়ায়— এ বিষয়টি নিয়ে প্রচারে সরকার ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে যাব।

ব্র্যাকের সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক আহমেদ নাজমুল হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে সহযোগিতায় বিশ্বব্যাংক ও ব্র্যাক গত বছরের জুলাই মাসে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। আজ এই ইভেন্ট আমাদের এই সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ আমরা আশাবাদী, বর্তমানে মানবিহীন হেলমেটের যে বাজার সেখানে এই হেলমেট নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাজার জয় করবে। মানসম্মত হেলমেট উপস্থাপনের পাশাপাশি আমাদের মোটরসাইকেল চালকের মধ্যে হেলমেট ব্যবহারের প্রবণতা নিয়েও কাজ করতে হবে।

সারাবাংলা/টিআর

জাতিসংঘ স্বীকৃত হেলমেট টপ নিউজ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা সড়কে নিরাপত্তা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর