বন্ড সুবিধার অপব্যবহার, ব্যবসায়ীর ২৭৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি
৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৫০
ঢাকা: বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে রাজধানীর লালবাগের নাহিদ এন্টারপ্রাইজ ২৭৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ায় মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। প্রতিষ্ঠানটির মালিকের নাম আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন।
সোমবার ( ৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড মইনুল খান সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের মালামাল খোলা বাজারে বিক্রি করার অভিযোগ ২৭৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে। একইসঙ্গে চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি সংক্রান্ত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও আয়কর ফাঁকির অভিযোগ তদন্তের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মইনুল খান আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটির মালিক আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন। প্রতিষ্ঠানটির জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০২০ সময়ের ভ্যাট সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে কয়েকবার চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি অনুসন্ধানের জন্য তথ্য না দিয়ে চিঠি দিয়ে বারবার সময় চেয়ে কালক্ষেপণ করে। এরপর প্রতিষ্ঠানটি তথ্য প্রদান করে তদন্ত কাজে সহযোগিতা না করায় প্রতিষ্ঠানটিতে চলতি বছরের গত ১৭ জুন ভ্যাট গোয়ন্দার উপ-পরিচালক তানভীর আহমেদের নেতৃত্বে নিবারক কার্যক্রম চালিয়ে ভ্যাট সংক্রান্ত বাণিজ্যিক কাগজ-পত্র জব্দ করা হয়।
এদিকে ভ্যাট গোয়েন্দা বলছে, নাহিদ এন্টারপ্রাইজ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। এর ফলে চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি সংশ্লিষ্ট মানি লন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি মূসক- ৬ দশমিক ৩ চালান ব্যতীত সেবা প্রদান করে যথাযথ রাজস্ব পরিশোধ না করে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য অন্যত্র গোপন দলিলে সংরক্ষণ করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছে।
শুধু তাই নয়, তদন্ত মেয়াদে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালে মে পর্যন্ত প্রায় পাঁচ বছর প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করেছে ২৯১ কোটি ৮৯ লাখ ৬৬ টাকা। কিন্তু জব্দকৃত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত বিক্রয়মূল্য ১৫৪০ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ২২ টাকা। যার মধ্যে মূসক আরোপযোগ্য বিক্রয়মূল্য ছিল ১৩৩৯ কেটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ১৯ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ১০৪৭ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৯৫৪ টাকার প্রকৃত বিক্রয়মূল্য গোপন করেছে। আর বিক্রয়মূল্য কম প্রদর্শন করায় অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১৫৭ কোটি ১২ লাখ ৭ কোটি ৯৯৩ টাকা উদঘাটন করা হয়। যার ওপর মাস ভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ১১৮ কোটি ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ২৪২ টাকা সুদসহ মোট ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ২৭৫ কোটি ৩২ লাখ ২ হাজার ২৩৫ টাকা।
অপরদিকে প্রতিষ্ঠানের দুটো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট ১৫৪০ কোটি ২৬ লাখ ৬৩ হাজার ২২ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। অবৈধ বন্ডেড পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের অর্থ এইসব লেনদেনে সংঘটিত হয়েছে।
বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের পণ্য যথাযথভাবে ঘোষণা না দিয়ে খোলাবাজারে ক্রয়-বিক্রয় করা ভ্যাট ও কাস্টমস আইন অনুসারে অপরাধ। ভ্যাট আইনের পাশাপাশি কাস্টমস আইনের অপরাধ যথাযথভাবে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এখতিয়ার সম্পন্ন হওয়ায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে এ বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ভ্যাট গোয়েন্দার অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ভ্যাট ফাঁকির এবং আয়কর ফাঁকির অভিযোগটি আরও গভীরভাবে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল’কে (সিআইসি) অনুরোধ করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা।
সারাবাংলা/এসজে/এনএস