প্রতিবছরই লাগতে পারে বুস্টার ডোজ
৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:২০ | আপডেট: ৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:৩৩
নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে; সামনের দিনগুলোতে প্রতি বছরেই ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে জানিয়েছেন করোনা ভ্যাকসিনের অন্যতম উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ফাইজারের প্রধান নির্বাহী ড. অ্যালবার্ট বুরলা।
এদিকে, ফাইজার প্রধান যখন এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তখনও নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়নি। এর আগেই ব্রিটেন ২০২২-২৩ সালের জন্য অতিরিক্তি ১১ কোটি ৪০ লাখ ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করেছে, যার মধ্যে পাঁচ কোটি ৪০ লাখ ফাইজার এবং বাকি ছয় কোটি মডার্না থেকে কেনা হবে।
ড. বুরলা বলছেন, করোনার বেটা-ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলায় ফাইজারের ভ্যাকসিনকে কার্যকর করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যদিও, ওই দুই ভ্যারিয়েন্টের জন্য ভ্যাকসিনে তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে হয়নি।
তিনি আরও বলেন, অমিক্রনের বিরুদ্ধে ফাইজার ভ্যাকসিনকে কার্যকর করার কাজ চলছে; ১০০ দিনের মধ্যেই হালানাগাদ করার কাজ শেষ হবে।
করোনা ভ্যাকসিন লাখো মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে উল্লেখ করে ফাইজার প্রধান বলেন, ভ্যাকসিন না হলে সমাজের মূল কাঠামোই ঝুঁকির মুখে পড়তে পারতো।
ফাইজার চলতি বছরেই তাদের এমআরএনএ ভ্যাকসিনের ৩০০ কোটি ডোজ এবং ২০২২ সালে ৪০০ কোটি ডোজ সরবরাহ করতে চায় উল্লেখ করে ড. বুরলা বলেন, বর্তমানে করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে একটা প্রতিযোগিতা চলছে তবে ২০২২ সালে দেশগুলো যত প্রয়োজন তত ভ্যাকসিন পাবে।
অন্যদিকে, বিশ্বে স্বাস্থ্য বিষয়ক দাতব্য সংস্থাগুলো দাবি করছে, ফাইজার-বায়োএনটেক-মডার্না মহামারির মধ্যে অনৈতিকভাবে মুনাফা বানিয়েছে। ২০২১ সালে কোভিড ভ্যাকসিন বিক্রি করে ফাইজার আয় করবে সাড়ে তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলার। তাদের শেয়ারের দামও এখন আকাশচুম্বী। অথচ, দেশে দেশে ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা যায়নি। আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশেই প্রতি ২০ জনে এক জনেরও কম মানুষের জন্য করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিত হয়েছে।
তবে, মুনাফা বানানোর প্রশ্নে কোনো রকম খেদ না দেখিয়েই ফাইজার প্রধান বলেছেন, লাখো প্রাণ রক্ষা পেয়েছে; সেটাই মূল কথা। এর বাইরেও, ট্রিলিয়ন ডলারের বিশ্ব অর্থনীতিকে তারা ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন উল্লেখ করে আগামী মহামারি রুখতে এই অভিজ্ঞতা জোরাল অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
অপরদিকে, মহামারিকে পুঁজি করে বাণিজ্যিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অভিযোগ নাকচ করে ড. বুরলা বলেন, ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিন পেয়েছে সস্তা খাবারের দামে আর নিম্ন আয়ের দেশগুলোর কাছে কোনো মুনাফা ছাড়াই ভ্যাকসিন বিক্রি করেছে ফাইজার।
ফাইজার প্রধান বলেন, তাদের ভ্যাকসিন মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় মজুত করা অনেক দেশের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তাই এক মাসের মধ্যে তারা নতুন ফর্মূলার ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়তে যাচ্ছে, যা তিন মাস পর্যন্ত সাধারণ ফ্রিজের তাপমাত্রায়ই মজুত করা যাবে। সাহারার দক্ষিণাঞ্চলীয় দূর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামোর আফ্রিকান দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এর বাইরেও, ফাইজারের করোনা পিলের কার্যকারিতা এবং স্কুল পড়ুয়া শিশুদের জন্য ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া গেছে বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন ফাইজারের প্রধান নির্বাহী ড. অ্যালবার্ট বুরলা।
সারাবাংলা/একেএম