‘খালেদার কিছু হলে জনগণ আওয়ামী লীগকে রেহাই দেবে না’
৩০ নভেম্বর ২০২১ ২০:৩৪ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১ ২০:৩৮
ঢাকা: খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে জনগণ আওয়ামী লীগকে রেহাই দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের বাইরে চিকিৎসার দাবিতে এ সমাবেশ আয়োজন করে ঢাকা বিভাগ বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা (সরকার) বলেন, আইনের কারণে দেশনেত্রীকে বাইরে যেতে দিতে পারছি না। কেনো মিথ্যা কথা বলেন। এখানে অনেক আইনজীবী আছেন তারা বলছেন, ওই ৪০১ ধারাতে বলা আছে একমাত্র সরকার, সরকারই পারে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে। এখন দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগ সরকারের, শেখ হাসিনা সরকারের। দেশনেত্র্রী বেগম খালেদা জিয়ার যদি সুচিকিৎসা না হয়, যদি তার ক্ষতি হয় এদেশের মানুষ কোনোদিন আপনাদের রেহাই দেবে না। দায় সব আপনাদেরকে বহন করতে হবে’
বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি জানান, গতকালও তার রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তবে চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করে তার বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।গতকাল (সোমবার) রাতে ১২টায় ডা. জাহিদ (এজেডএম জাহিদ হোসেন) আমাকে টেলিফোন করলেন, আপনি এখনই চলে আসুন হাসপাতালে। আমি রাতেই হাসপাতালে গেলাম। গিয়ে দেখি আমাদের যেসমস্ত চিকিৎক তার চিকিৎসা করছেন প্রায় ১০ জন। তারা বসে আছেন। প্রত্যেকের মুখ অত্যন্ত অত্যন্ত আপনার কিছুটা বলা যেতে পারে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন-চিন্তিত। আমরা ভয় ঠুকেছে কি হয়েছে? তারা বললেন, আমরা যেটা আশঙ্কা করেছিলাম, যেটা ভয় পাচ্ছিলাম আমরা বলেছিলাম যেকোনো সময় আবার রক্তক্ষরণ হতে পারে কালকে আবার রক্তক্ষরণ হয়েছে।’
‘আমাদের সেই চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গত তিনটা সংকট যেভাবে পার হয়েছেন গতকাল রাতেও সেই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। একজন সংগ্রামী মহিলা দেশনেত্রী তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, অসুখের সঙ্গেও পাঞ্জা লড়ছেন’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সকালে উঠে আমি আবার ডা. জাহিদকে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি আমাকে জানালেন, ম্যাডাম এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। এই ভালো ডাক্তাররা বলেছেন ভালো নয়। কারণ, তারা পরিস্কার করে বলেছেন যে, তার যে অসুখ সেই অসুখের চিকিৎসা এখন আর এখানে নেই। এই চিকিৎসা করতে হলে তাকে অবশ্যই বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।’
সমাবেশ শুরু হয় দুপুর দেড়টায়, শেষে হয় সাড়ে ৪টায়। সমাবেশের শুরুতে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের আহবায়ক শাহ নেসারুল হক খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন।
‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ শ্লোগানে শ্লোগানে হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থল মুখর করে রাখে। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরা থেকে ফকিরেরপুল সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের তিল পরিমাণ ঠাই ছিলো না। রাস্তায় বসে তারা নেতাদের বক্তব্য শোনেন।
সমাবেশে ৪টি ছোট ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিশাল আকৃতির ছবি সম্বলিত ব্যানারে লেখা ছিলোপ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং অবিলম্বে উন্নত চিকিতসার জন্য বিদেশে প্রেরণের দাবিতে সমাবেশ।
পরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, আমরা বেগম জিয়ার কাগজপত্র বিদেশে পাঠিয়েছি। কাদের সামনে বলছেন? কুটনীতিকদের সামনে, বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতদের সামনে। কেনো বলছেন? বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকরা, রাষ্ট্রদূতরা ইতিমধ্যে চাপ সৃষ্টি করেছে সরকারের ওপরে যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠাও চিকিৎসার জন্য।’
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকদের সম্পর্কে সরকারের এক মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কী দুর্ভাগ্য আমাদের, কী জাতি আমরা, আমরা এমন একটা সরকার পেয়েছি জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। একজন মন্ত্রী বলছেন, ডাক্তাররা সাহেবকে বিএনপি যা বলতে বলেছে তারা তাই বলছেন। ধিক্কার দেই, ধিক্কার দেই আমি সেই মন্ত্রীকে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। বিশেষ করে আমার তরুণ ছাত্র যুবক ভাইদের আহবান করতে চাই- এদেশের কোনো পরিবর্তন হয়নি তরুণদের অংশগ্রহণ ছাড়া। তোমাদের জেগে উঠতে হবে, তোমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য। আন্দোলন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে সরাবো এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করব।’
সরকারের পতন শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধবংস। আজকে পত্রিকাতে দেখবেন এক হাজারটা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। দেখেন শুরু হয়েছে পতন। অর্ধেকের বেশি হেরে গেছে আওয়ামী লীগ।’
ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের রফিকুল ইসলাম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, শাহিদা রফিক, তৈমুর আলম খন্দকার, আবদুল হাই, আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবীর খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামারুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন আবদুস সালাম আজাদ, তাবিথ আউয়াল, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, সালাহউদ্দিন সরকার, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/একেএম