ওমিক্রন প্রতিরোধ বৈঠক আজ, আসতে পারে নতুন নির্দেশনা
৩০ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৪১ | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৩৭
ঢাকা: বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের হার প্রায় দুই মাসের অধিক সময় দুই শতাংশের নিচে। এমন অবস্থায় নতুনভাবে শঙ্কা জাগাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন রূপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯-এর এই নতুন রূপের নাম দিয়েছে ওমিক্রন (বি.১.১.৫২৯)। কোভিড-১৯ সংক্রমণের এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর)। এই বৈঠক থেকেই আসতে পারে নতুন নির্দেশনা।
ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে সকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৈঠক শেষে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২টার মধ্যে বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান এসব তথ্য জানান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট যেন কোনোভাবেই দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আকাশপথ, স্থল, সমুদ্রবন্দরসমূহে কঠোর সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রণয়ন ও তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি সবশেষ গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি সংক্রমণশীল ও বিপজ্জনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বাংলাদেশেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে ১৫ দফা নির্দেশনাও দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
গত রোববার (২৮ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলামের সই করা এ সংক্রান্ত চিঠিতে নির্দেশনাগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট: ভারতের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
নির্দেশনায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, এসওয়াতিনি, লেসোথোর মতো দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের বন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোর করতে বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্ট ইস্যুতে অন্য কোনো দেশ নিয়ে সতর্কতা জারি করলে সেই দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীর জন্যও একই পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত দেশগুলো থেকে কোনো যাত্রী এলে ১৪ দিনের কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করতে হবে।
জনসমাগম নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা অন্য যেকোনো ধরনের জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে গেলে প্রতিটি ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে সবসময় নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরতে হবে এবং সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, রেস্তোরাঁতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম করতে হবে। সব ধরনের জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে (বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কমসংখ্যক লোক অংশ নিতে পারবে।
মসজিদসহ সব ধরনের ধর্মীয় উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি গণপরিবহনেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। পাশাপাশি সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, অফিসে প্রবেশ ও অবস্থানের সময় বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি দাফতরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবাদাতা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সবসময় সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে হবে। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রাখার কথাও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধ প্রসঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা তৈরির জন্য মাইকিং ও প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডার মাইক ব্যবহার এবং এ কার্যক্রমে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করা যেতে পারে বলেও স্বাস্থ্য অধিদফতর মনে করছে।
অধিদফতর বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের (বি.১.১৫২৯) সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। করোনার এই ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি সংক্রামক বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাই এই ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ওমিক্রন কেন শঙ্কা বাড়াচ্ছে?
কোভিড-১৯ ভাইরাসের অবিশ্বাস্যরকমভাবে পরিবর্তিত একটি রূপ হচ্ছে ওমিক্রন। দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক অধ্যাপক তুলিও দে অলিভেইরা বলেছেন, ‘অস্বাভাবিকভাবে বিপুলসংখ্যক মিউটেশন ঘটেছে এতে’ এবং এটি করোনার অন্যান্য রূপগুলো থেকে ‘একেবারেই আলাদা’।
তিনি বলেন, ‘এতে সব মিলিয়ে ৫০টিরও বেশি মিউটেশন ঘটেছে। আর শুধু এর স্পাইক প্রোটিনেই ৩০টিরও বেশি মিউটেশন হয়েছে, যা ভাইরাসটিকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। স্পাইক প্রোটিন ব্যবহার করেই ভাইরাসটি আমাদের শরীরের কোষে প্রবেশ করে। বেশিরভাগ ভ্যাকসিনও এই স্পাইক প্রোটিনকে টার্গেট করেই বানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাইরাসটির যে অংশ আমাদের শরীরের কোষের সঙ্গে প্রথম সংযোগ স্থাপন করে, সেই রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেনে ১০টিরও বেশি মিউটেশন ঘটেছে, এর আগে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বেলায় যেখানে মাত্র দু’টি মিউটেশন ঘটেছিল। কিন্তু রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেনে মাত্র দু’টি মিউটেশন নিয়েই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বকে ঝাঁকুনি দিয়েছিল।’
বিজ্ঞানীদের হাতে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য এসেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর বদল হয়েছে মূলত স্পাইক প্রোটিনে। ৩২ বার স্পাইক প্রোটিনের জিনগত কাঠামোতে বদল হয়েছে। জিনের প্রোটিন মধ্যস্থ অ্যামাইনো অ্যাসিডের স্থান বদল হয়েছে ৩২ বার। ফিউরিন (একটি প্রোটিয়েজ উৎসেচক) ক্লিভেজ সাইটেও মিউটেশন হয়েছে তিন বার। অর্থাৎ রূপ না বদলালেও চরিত্র বদলেছে বেশ কিছুটা।
আরও পড়ুন:
- উদ্বেগ ছড়াচ্ছে ওমিক্রনের সক্ষমতা
- ওমিক্রন শনাক্ত করে বিপদে দক্ষিণ আফ্রিকা
- ইউরোপ-এশিয়ায় নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
- নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে ডব্লিউএইচও’র উদ্বেগ
- ওমিক্রন প্রতিরোধে পরামর্শক কমিটির ৪ দফা সুপারিশ
সারাবাংলা/এসবি/এমও