Monday 13 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন রাজপথেই মুছে গেল নাঈমের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ নভেম্বর ২০২১ ২২:২২ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২১ ০৯:২৬

সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান

আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পরিবারের মত উপেক্ষা করে বিজ্ঞান বিভাগ বাদ দিয়ে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন নাঈম। নাঈমের বড় ভাইয়ের ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু মেডিকেলে চান্স না পাওয়ায় তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বড়ছেলের ডাক্তারি না পড়ার অপূর্ণ সাধ বাবা-মা মেটাতে চেয়েছিলেন ছোট নাঈমকে দিয়ে। কিন্তু নাঈম চায়নি তার বড় ভাই যেখানে চান্স পায়নি, সেটা সে পড়বে। সবার অমতে যেয়ে তাই নটরডেম কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়। ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে ব্যারিস্টারি পড়ে আইন পেশায় আসবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন অকাজেই ঝরে গেল রাজপথে। সড়ক দুর্ঘটনায় রক্তেই ধুয়ে গেল নাঈমের সব স্বপ্ন।

বিজ্ঞাপন

চোখের পানি মুছতে মুছতে কথাগুলো বলছিলেন গুলিস্তানে দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত নাঈম হাসানের বড় ভাই শাহরিয়ার হাসান। তিনি বলেন, ‘আইন বিভাগে পড়ে বড় মাপের ব্যারিস্টার হতে চেয়েছিল নাঈম। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল।’

শাহরিয়ার বলেন, তারা কামরাঙ্গিরচর জাউলাহাটি চৌরাস্তায় নিজেদের বাড়িতে থাকেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে নাঈম ছিল ছোট। নাঈম নটরডেম কলেজের মানবিক বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিল। বাবা মোঃ শাহ আলম দেওয়ান সামরিক বাহিনীতে চাকরি করতেন। অবসরের পরে নীলক্ষেতে বইয়ের দোকান করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কাজিরখিল দেওয়ানবাড়ী গ্রামে।

কাঁদতে কাঁদতে শাহরিয়ার আরও বলেন, ‘সকালে বাসায় এক সাথে নাস্তা করি। সাতটার দিকে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয় নাঈম। কে জানতো এই যাওয়াই নাঈমের শেষ যাওয়া হবে। জানলেতো ওকে যেতে দিতাম না।’

দুর্ঘটনার খবর শুনে দুপুরে হাসপাতালে ছুটে আসেন নাঈমের বাবা শাহ আলম দেওয়ান। হাসপাতালে এসে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে সন্তানের জন্য বিলাপ করতে থাকেন। মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালের মর্গে ছুটে আসেন নাঈমের সহপাঠিসহ এলাকার অনেক লোক।

ঢামেক হাসপাতালে নাঈম হাসানের বাবা শাহ আলমের আহাজারি

বুধবার বিকালে নাঈমের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় মৃতদেহ নিয়ে যান স্বজনরা। ভাই শাহরিয়ার জানায়, কামরাঙ্গিরচরের বাসায় প্রথম জানাজা হবে। পরে রাতেই মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি লক্ষিপুর রামগঞ্জ নিয়ে যাবেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৪ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে গুলিস্তান হল মার্কটের সামনে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় নাঈম। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে বেলা সোয়া ১২টায় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের ব্যবসায়ী মোঃ রাসেল জানান, গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনের রাস্তায় পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হবার সময় গুলিস্তান জিরো পয়েন্টগামী সিটি কর্পোরেশনের ময়লার একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আঘাত পায় সে। সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাসেল আরও জানান, ঘটনার সময় ময়লার গাড়ি ছাত্রটিকে প্রথমে ধাক্কা দেয়। পরে কয়েক গজ ছেঁচড়ে নিয়ে যায়। অভিমানের সুরে রাসেল বলেন, ‘ঘটনাস্থলের কিছুটা অদুরে বেশ কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু চিল্লাচিল্লি শুনে একজন পুলিশও এগিয়ে আসেনি। পরে আমিসহ সেখানে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

রাসেলসহ আরেক শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম ফাহিমের অভিযোগ ঢাকায় সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করে। এর আগেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।

পল্টন থানার ওসি (তদন্ত) সেন্টু মিয়া বলেন, গুলিস্তানে দুর্ঘটনায় নিহত নাঈমের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ির চালক রাসেল খান (২৭)কে আটক করা হয়। গাড়িও জব্দ করা হয়। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এর আগে গত ২০ জানুয়ারি দয়াগঞ্জ মোড়ে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর টেলিফোন ইনচার্জ খালিদ হোসেন (৫৫)। তার বাসা ছিল ডেমরা ডগাইর এলাকায়। বাসা থেকে মোটর সাইকেলে করে অফিসে আসছিলেন তিনি। তখন গাড়ি ও চালককে আটক করেছিল পুলিশ। গত ১০ আগস্ট শ্যামপুর ধোলাইরপাড়ে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন গার্মেন্টস কর্মী ফারুক হোসেন (৪০)।

সারাবাংলা/এসএসআর/আরএফ

সড়ক দুর্ঘটনা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নাঈম সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি

বিজ্ঞাপন

লিটনের দুই অনুপ্রেরণা কারা?
১৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:১৩

আরো

সম্পর্কিত খবর