Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিবন্ধনের ‘সুযোগবঞ্চিত’ তৃতীয় লিঙ্গের ৩০০ জন পেলেন ভ্যাকসিন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ নভেম্বর ২০২১ ১৭:৫২ | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২১ ১৯:৫০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: তাদের অনেকের জাতীয় পরিচয় পত্র নেই, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্টও নেই। ফলে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিতেও নিবন্ধন করতে পারছিলেন না। নিবন্ধনের সুযোগবঞ্চিত বিশেষ জনগোষ্ঠী তৃতীয় লিঙ্গের এমন ৩০০ জনকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন পেয়ে উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন তাদের কেউ কেউ, আবার কেউ আবেগাক্রান্তও হয়েছেন। তৃতীয় লিঙ্গের এই তিনশ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া শেষে বেদে সম্প্রদায়ের ১৫০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২২ নভেম্বর) দুপুর ২টায় নগরীর আন্দরকিল্লায় জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের হল রুমে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর নাগরিকদের অ্যাস্ট্রজেনেকার তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু হয়। চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

করোনার ভ্যাকসিন নিতে সকাল গড়াতেই সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সামনে ভিড় জমাতে থাকেন তৃতীয় লিঙ্গের লোকজন। বিশেষ এই জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী বেসরকারি সংগঠন ‘সূর্যের আলো’ ও ‘নবজাগরণে’র সদস্যরা তাদের সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেন। দুই বুথে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই সুশৃঙ্খলভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়।

করোনার ভ্যাকসিন পেয়ে খুবই খুশি তৃতীয় লিঙ্গের খুশু। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। প্রথমদিকে দেওয়ার আগে একটু ভয় লাগছিল। কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় তেমন কিছুই মনে হয়নি। এখন আর ভয় লাগছে না।’

তৃতীয় লিঙ্গের আরেকজন সেতু করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের তো জন্ম নিবন্ধন কার্ড, এনআই কার্ড কিছুই নেই। এজন্য ইচ্ছা থাকলেও আমরা নিবন্ধন করতে পারিনি। অথচ আমরা পেটের তাগিদে বিভিন্ন এলাকায় যাই, চলাফেরা করি। আমাদের জন্য ভ্যাকসিনটা খুবই জরুরি ছিল। আজ ভ্যাকসিন পেয়ে খুবই আনন্দ লাগছে। আশা করছি দ্বিতীয় ডোজটাও সুন্দরভাবে পাব।’

তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের সংগঠন সূর্যের আলোর সভাপতি ফাল্গুনী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই দিন আগে একটি সভায় আমি সিভিল সার্জন স্যারকে আমাদের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছিলাম। স্যার মাত্র এক দিনের মধ্যেই আয়োজন করে আমাদের কাছে খবর পাঠান। আমাদের লোকজন যেহেতু নিবন্ধন করতে পারছে না, কারণ অনেকেরই এনআইডি নেই, দু’য়েকজনের হয়তো আছে, তাই তারা ভেবেছিল ভ্যাকসিনই পাবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তিনি সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে বলেছেন। আজ ভ্যাকসিন পেয়ে খুবই ভালো লাগছে যে আর দশ জনের মতো আমারও অধিকার আছে।’

বিজ্ঞাপন

কার্যক্রম তত্ত্বাবধানকারী চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. আসিফ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিবন্ধন ও গণটিকা কার্যক্রমের বাইরে ভ্যাকসিন দেওয়ার কোনো কর্মসূচি আমাদের ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা গতকাল (রোববার) থেকে বস্তিতে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি। আজ থেকে আমরা বিশেষ জনগোষ্ঠী যাদের নিবন্ধনের সুযোগ নেই, তাদের ভ্যাকসিন দিয়েছি। এর ধারাবাহিকতায় আমরা বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনকেও ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও জানান, ৫০০ জনের প্রস্তুতি থাকলেও প্রথম দিনে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর ৩০০ জন হাজির হয়েছিলেন। তাদের সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের কেউ বাদ গেলে তাদের সবাইকে পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি সিভিল সার্জন আসিফ খান।

সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বেদে সম্প্রদায়ের ১৫০ জনকে বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ

এদিকে, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের বিশেষ করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টা থেকে নগরীর জিইসি মোড়ের ক্যাম্পাসে এ কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধন করেন ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির যেসব শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেনি বা করতে পারেনি, তারা শিক্ষার্থী পরিচয়পত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ড প্রদর্শন করে ভ্যাকসিন   নিয়েছেন। বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ কার্যক্রমের আওতায় হাজারখানেক শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন নেন। এ কার্যক্রম মঙ্গলবারও চলবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য বোরহানুল হাসান চৌধুরী, ট্রেজারার এ কে এম তফজল হক, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোহীত উল আলম, প্রকৌশল ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন তৌফিক সাঈদ, রেজিস্ট্রার খুরশিদুর রহমান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জোনাল মেডিকেল অফিসার ডা. তপন কুমার চক্রবর্তী, ইপিআই টেকনিশিয়ান মৃণাল দাশ।

করোনায় আক্রান্তমৃত্যুহীন একদিন

গত প্রায় ২০ মাসে চট্টগ্রামে প্রথম একই দিনে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে কেউ শনাক্ত হননি এবং একইসঙ্গে কেউ মারাও যাননি। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার শূন্য।

সোমবার (২২ নভেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের দিন অর্থাৎ রোববার ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের সাতটি ল্যাবে ৭৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় কেউ করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হননি। চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় কারও মৃত্যু হয়নি।

২০২০ সালের ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ৯ এপ্রিল প্রথম একজনের মৃত্যু হয় চট্টগ্রামে।

সংক্রমণের ১৯ মাস পেরিয়ে এখন চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ৩৫০ জন।

এর মধ্যে মহানগর এলাকায় ৭৪ হাজার ৫০ জন এবং উপজেলায় ২৮ হাজার ৩০০ জন। মারা গেছেন ১ হাজার ৩৩০ জন। এর মধ্যে ৭২৩ জন মহানগর ও ৬০৭ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

করোনার ভ্যাকসিন টপ নিউজ তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ভ্যাকসিন

বিজ্ঞাপন

রিশাদ-জাহানদাদে কুপোকাত সিলেট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর