খালেদাকে বিদেশে না পাঠালে ‘এই আন্দোলন’ আপনাকে গদিচ্যুত করবে
২০ নভেম্বর ২০২১ ২০:০২
ঢাকা: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গণঅনশন থেকে এই সরকারকে খুব পরিষ্কার ভাষায় আমরা বলে দিতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। তা না হলে গণঅনশনের মধ্য দিয়ে এবার যে আন্দোলন শুরু হলো, সেই আন্দোলন আপনাকে গদিচ্যুত করবে।’
শনিবার (২০ নভেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত গণঅনশন কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে এ গণঅনশন আয়োজন করে বিএনপি।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছেন। আমরা ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছি, বিদেশে ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশে চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব। তার যেসব জটিলতা আছে, সেই জটিলতাগুলো বিদেশে আরও এডভান্স সেন্টারে টিট্রমেন্ট দেওয়া না হলে তাকে সুস্থ করা যাবে না। তার (খালেদা জিয়া) পরিবার থেকে আবেদন জানানো হয়েছিলো তাকে বিদেশে ট্রিটমেন্ট করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। তারা সেই সুযোগ দেয়নি। উপরন্তু পার্লামেন্টে সংসদ নেত্রী এমনভাষায় কথা বলেছেন, যে ভাষা কোনো মতে গ্রহণযোগ্য নয়।’
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মিথ্যাচার করেছেন আইনমন্ত্রী। ৪০১ ধারায় এই সরকারের সম্পূর্ণ অধিকার আছে এবং এটা তাদের দায়িত্ব। যেকোনো নির্দেশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের মাটির সাথে একেবারে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছেন। মা ও মাটি বলতে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বুঝি। নেত্রীকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত করতে হবে। সেজন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত আছি। আসুন আমরা সবাই মিলে শপথ গ্রহণ করি- দেশনেত্রীর মুক্তি এবং তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা নাই। আমি সাক্ষী, জিয়াউর রহমানের আমলে ৭৯ সালে আমাকে জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিলো। আমি একবছর জার্মানিতে ছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। আমি কী এই সরকারের কাছে জানতে পারি সংবিধানের কোন আর্টিক্যালে, কোনো চ্যাপ্টারে, কত পৃষ্ঠায় কোনো রাজনৈতিক বন্দিকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো যাবে না- এই কথা আমি জানতে চাচ্ছি। পৃথিবীতে এমন কোনো জিনিস নাই যার কোনো শেষ না। আমি সরকারকে বলতে চাই, এই দিনও দিন নয়,এর পরও দিন আছে। যেদিন ক্ষমতা থেকে যাবেন সেদিনের কথা একটু চিন্তা করুন। বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন, অনেক নির্যাতন করেছেন। মনে রাখবেন এটারও শেষ আছে।’
‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি তার কোনো ক্ষতি হয় তখন এই সরকারের কী হবে, আমি জানি না, আমি ভাবতেও পারি না। আমার লোম শিউরে ওঠে। যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয় ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে আমি পরিস্কার করে বলে দিচ্ছি’- বলেন আ স ম আব্দুর রব।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি কামনা করি, যত অসুস্থতা থাক বেগম খালেদা জিয়া যেন সুস্থ থাকেন। যত ধরনের বিপর্যয় আসুক আপনারা আজ থেকে যে আন্দোলন করছেন এই আন্দোলন অব্যাহত রাখুন। ব্যাপক মানুষকে এক সাথে করে ধীরে ধীরে এই আন্দোলনকে এমন জায়গা নিয়ে যেতে হবে, যাতে এই স্বৈরাচারের পতন হয়।’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা হাঙ্গার স্টাইকের মাধ্যমে বলছি, দেশনেত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি যদি অনতিবিলম্বে পূরণ না হয়, তাহলে দেশের জনগণের দাবি পুরণের জন্য সরকারের পতনের আন্দোলনে আমাদেরকে আগামী দিনে অগ্রসর হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, উন্নত চিকিৎসা, এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধার- এটা শুধু বিএনপির দাবি নয়, এদেশের জনগণের দাবি। তাই এই দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। সেই আন্দোলনে আমরা যেতে বাধ্য হবো। প্রয়োজনীয় কর্মসূচির মাধ্যমে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য সকলে প্রস্তুতি নিন।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা যেন না ভাবি এখানেই আমাদের দায়িত্ব শেষ। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সফল না হবো ততক্ষণ আমাদের চলার গতি থামবে না। মাঠ বলে দেবে কথন কী করতে হবে। নেতারা নির্দেশ দেওয়ার সময় নাও পেতে পারেন। সবসময় কোন জায়গায় কোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন সেটা নিজের বুদ্ধি দিয়ে ঠিক করতে হবে। যারা যেখানে আছেন দয়া করে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করার জন্য সবসময় এলাকায় অবস্থান করবেন। আমাদের সংগ্রাম শুরু। কারণ শেখ হাসিনাকে সবক দিয়ে লাভ নাই।’
বিএনপির প্রচার স্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের পরিচালরনায় গণঅনশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আবদুল্লাহ আল নোমান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, মাহবুব উদ্দিন খোকন, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শ্যামা ওবায়েদ, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শিরিন সুলতানা, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিমউদ্দিন আলম, হায়দার আলী লেলিন, আকরামুল হাসান, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, তাবিথ আউয়াল, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, সুলতানা আহমেদ, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, হেলাল খান, সাদেক আহমেদ খান, আবুল কালাম আজাদ, ফজলুল রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।
গণঅনশনের কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, আবদুল করীম আব্বাসী, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এমএ রকিব, অধ্যাপক আব্দুল করীম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খন্দকার লুতফুর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনডিপির আবু তাহের, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের শওকত মাহমুদ, শত নাগরিকের আবদুল হাই শিকদার, বিশ্ববিদ্যালয়র সাদা দলের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, এ্যাবের প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ড্যাবের অধ্যাপক আব্দুস সালাম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, ঢাাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের ইলিয়াস খান প্রমুখ নেতা একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
গণঅনশনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, চেয়াপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাক সাহিদা রফিক, তাহমিনা রুশদীর লুনা, শাহজাদা মিয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/একেএম