Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৬২ শতাংশই জানেন না, তারা ডায়াবেটিস রোগী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৫৫ | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০০:০২

ঢাকা: দেশে প্রায় পৌনে ২ কোটি মানুষের ডায়াবেটিস আছে। এর মধ্যে ৬২ শতাংশই জানে না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ৩৫ শতাংশ ডায়াবেটিস আক্রান্তরা নিয়মিত চিকিৎসা নেন। বাকি তিন শতাংশ এখনো নিয়মিত চিকিৎসার বাইরে আছেন। বর্তমানে শহর ও গ্রামে প্রায় সমানভাবে বেড়ে চলেছে ডায়াবেটিসের রোগী। তাই গুরুতর অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এখনই এটি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

রোববার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম।

বিজ্ঞাপন

‘বাংলাদেশে ডায়াবেটিস: বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএমএমইউ’র এই সহযোগী অধ্যাপক।

ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, বাংলাদেশে যত ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন, তার অর্ধেকের বেশি জানেনই না যে তারা আক্রান্ত। ফলে চিকিৎসাও নেন না তারা। আর দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৮ শতাংশ ডায়াবেটিস আক্রান্ত। মানুষের খাদ্যাভ্যাসসহ নানা কারণে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, কিছু জেনেটিক ত্রুটি আছে, বিষয়টি নিয়ে আমরা গবেষণা করছি। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রম না করা। এছাড়া প্রযুক্তির নানা সুবিধা নিয়ে আমরা ধীরে ধীরে একটা অকর্মণ্য জাতিতে পরিণত হচ্ছি। পাশাপাশি মানসিক চাপ, পরিবেশ দূষণ, খাদ্যে ভেজাল সবকিছু মিলিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের ঝুঁকি বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

সেমিনারে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আশরাফুজ্জামান বলেন, আমাদের চিকিৎসক স্বল্পতাসহ নানা সমস্যা আছে। এজন্য আমাদের আরও যেমন জনবল দরকার, তেমনি আমাদের গবেষক দরকার।বাংলাদেশে ডায়াবেটিক চিকিৎসায় নানাক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ১০তম ডায়াবেটিস প্রবণ দেশ এবং বাস্তব পরিস্থিতি এর চেয়েও গুরুতর। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সর্বস্তরের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা এবং ডায়াবেটিক রোগীর সেবায় সুলভে ওষুধ সরবরাহ থেকে শুরু করে অন্যান্য সহযোগী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস চারটি প্রধান অসংক্রামক রোগের মধ্যে একটি, যা বিশ্বব্যাপী অসুস্থতা ও মৃত্যুহারে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। বাংলাদেশে শহর ও গ্রামাঞ্চল উভয় ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিসের প্রকোপ বাড়ছে। তবে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ গবেষকদের ডায়াবেটিস নিয়ে গবেষণায় আরও এগিয়ে আসতে হবে। এতে দেশে ও রোগীর সামনের দিনগুলোতে সহজে ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে।

সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা দেশের বর্তমান ডায়াবেটিস পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা তথ্য ও চিকিৎসা নিয়ে অসঙ্গতি তুলে ধরেন। একইসঙ্গে নতুন যুগের এই মহামারি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি প্রতিরোধের গুরুত্বও তুলে ধরা হয়।

বিএসএমএমইউ অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মো. আবুল হাসানাত, ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. এম এ সামাদ, ইউনাইটেড হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. হাফিজুর রহমান এতে বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে দেশে ডায়াবেটিস নিয়ে গবেষণায় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত নানা প্রকাশনার ভিত্তিতে পাঁচ চিকিৎসককে সেরা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তারা হলেন— চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার, বিএসএমএমইউ অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. এ বি এম কামরুল হাসান, মার্কস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাজমা আক্তার এবং চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. সুমন রহমান চৌধুরী।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল টপ নিউজ ডায়াবেটিস দিবস বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর