জয়পুরহাটে আলু বীজ ও টিএসপি সারের সংকট
১৩ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৪২
জয়পুরহাট: মৌসুমের শুরুতেই ন্যায্যমূল্যে উচ্চ ফলনশীল আলু বীজ ও ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। দুই থেকে তিনশ টাকা বেশি দামে প্রতিবস্তা আলু বীজ ও টিএসপি সার কিনতে হচ্ছে তাদের। আবার এসব কৃষিপণ্য কেনার পর রশিদও দেওয়া হচ্ছে না। ন্যায্যমূল্যে না পেয়ে প্রয়োজনের স্বার্থেই এসব কৃষিপণ্য বেশি দাম দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
জয়পুরহাটে এ বছর ৪০ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। যেখানে উচ্চ ফলনশীল বীজ আলুর চাহিদা ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত ১১শ’ হেক্টর জমিতে কৃষকরা আলু রোপণ করেছেন। জেলায় উচ্চ ফলনশীল আলু বীজের চাহিদা ৪৬ হাজার টন। যেখানে সরকারি বিএডিসি এবং ব্র্যাক ও এসিআইসহ অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানির আলু বীজের বরাদ্দ মাত্র ১০ হাজার।
ব্র্যাক অনুমোদিত প্রথম শ্রেণির আলুবীজ ডিলার ক্ষেতলালের চৌমুহনী বাজারের শাহজামান তালুকদার বলেন, গত বছর ব্র্যাকের আলুবীজ রোপণ করে উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। এজন্য ব্র্যাকের আলু বীজে আগ্রহ বেশি কৃষকদের। খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে এই বীজ দুই থেকে তিনশ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। তিনি প্রশাসনিকভাবে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।
ব্র্যাকের অ্যাস্টেরিক জাতের এ গ্রেড ৪০ কেজির এক বস্তা আলু বীজের দাম ১ হাজার ৭২০ টাকা। বি গ্রেডের দাম ১ হাজার ৬৪০ টাকা। আর ডায়মন্ড জাতের এ গ্রেড আলু ১ হাজার ৫৬০ টাকা এবং বি গ্রেডের দাম ১ হাজার ৪৪০ টাকা। কিন্তু জেলার বিভিন্ন বাজারে ব্র্যাকের প্রতিবস্তা আলু বীজ নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দুই থেকে তিনশ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
তবে গত বছর গাছে মড়ক দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর আলু বীজের চাহিদা কমে গেছে। বিএডিসির অ্যাস্টেরিক জাতের এ গ্রেড আলু বীজের ৪০ কেজির প্রতিবস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০ টাকা এবং বি গ্রেড আলুবীজ বিক্রি হচ্ছে ৯৮০ টাকা বস্তা।
ক্ষেতলালে বেলগাড়ি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ইটাখোলা বাজার থেকে তিনি হাজার ৫০০ টাকা বস্তায় টিএসপি সার কিনেছেন। একই গ্রামের কৃষক কফির উদ্দিন বলেন, ইটাখোলা বাজার থেকে সার কেনার পর রশিদ চেয়েও তিনি পাননি। আক্কেলপুরের সোনাই মাগুরা গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ব্র্যাকের ৪০ কেজির একবস্তা আলু বীজের দাম দুই হাজার ২০০ টাকা চাওয়ায় তিনি ক্ষেতলালের বটতলী থেকে হাজার ৬০ টাকা দামে বিএডিসির ২০ বস্তা আলুবীজ কিনেছেন।
বেশি দামে টিএসপি সার বিক্রির কথা স্বীকার করে ক্ষেতলালের বটতলী বাজারের বিসিআইসির অনুমোদিত সার ব্যবসায়ী দুলাল মিঞা সরদার বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে সারের দাম কিছুটা বেশি। এ মাসের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা বাজারে দ্রুত সরবরাহ হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় চলতি মাসে ইউরিয়া ৫ হাজার ৪২২, টিএসপি ২ হাজার ৭১, এমওপি ৪ হাজার ৬২০ এবং ডিএপি সার ৪ হাজার ৬০৩ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত মাসেরও বরাদ্দ রয়েছে। বিসিআইসির ৫৮ জন, বিএডিসির ১১১ জন এবং কার্ডধারী ৩২৩ জন সার ব্যবসায়ীর মাধ্যমে কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে এসব সার কিনতে পারবেন। কৃষি উপকরণ কৃষকরা যেন ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারেন সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার গাফিলতি বরদাশত করা হবে না।
সারাবাংলা/এএম