Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মামলা দায়েরে বিধিনিষেধ মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি

রোকেয়া সরণি ডেস্ক
১২ নভেম্বর ২০২১ ১৯:৩৫ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ১৯:৪১

ঢাকা: মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ বিচারপ্রাপ্তির সুযোগকে সংকুচিত করবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ফলে এ ধরনের যেকোনো বিধিনিষেধ মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি বলেও মত সংস্থাটির।

মহিলা পরিষদ বলছে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করলাম— ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার জন্য পুলিশকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মামলা রুজু  করার জন্য বিধিনিষেধ বিচারপ্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত করবে, যা মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এসব কথা বলেছে। শুক্রবার (১২ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এই বিবৃতিতে সই করেছেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সাড়ে চার বছর আগে দায়ের করা আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার। রায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামিকেই খালাস দেওয়া হয়েছে।

মহিলা পরিষদ এই রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিবৃতিতে বলছে, রাষ্ট্রপক্ষ এই ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি উল্লেখ করে আদালত বলেছেন, মেডিকেল রিপোর্ট ও ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ আনা হলেও এটিকে ধর্ষণ বলা যাবে না। কিন্তু মেডিকেল রিপোর্টই ধর্ষণ মামলার একমাত্র প্রমাণ (এভিডেন্স) না। আরও অনেকগুলো পারিপার্শ্বিক এভিডেন্স থাকে, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে মামলার বিচারকাজ এগিয়ে চলে। বিচারিক আদালতের এ ধরনের বিধিনিষেধ তৈরি করার মতো মন্তব্য ভবিষ্যতে ধর্ষণের ঘটনায় ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিচার মামলায় রায় ঘোষণার সময় বলেছেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করেছেন। এজন্য তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা জানি, প্রচলিত আইন সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে রিভিউ করার ক্ষমতা সংবিধান অনুযায়ী কেবল সুপ্রিম কোর্টের আছে। দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য সাধারণ জনগণ ও ভুক্তভোগীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সেইসঙ্গে প্রচলিত ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারায় নির্যাতনের শিকার নারী ও কন্যার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকায় নির্যাতনের শিকার নারী ও কন্যার মৌলিক মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।

এ কারণে এ ধরনের আইন বাতিল করে সমতাপূর্ণ, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন আইন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে মহিলা পরিষদ।

এর আগে, রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণার পর আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, ভিকটিমের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থাকলেও ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ডাক্তারি পরিক্ষায় কুমারী মেয়ের যে আলামত, সেটি প্রমাণ হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনে আদালত ও পাবলিক টাইম নষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে আমার একটি পর্যবেক্ষণ আছে— ৭২ ঘণ্টা বা এর একটু কম সময় পার হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। এরকম হলে পুলিশ যেন ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরে কোনো ধর্ষণের মামলা না নেয়।

২০১৭ সালে দায়ের করা এই মামলাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল অনলাইনে-অফলাইনে। আসামি সাফাতসহ বাকিদের গ্রেফতারে নানা ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেন। রায়ে পাঁচ আসামির সবাই খালাস পাওয়ার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের পর্যবেক্ষণও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আইনজীবী, নারী অধিকারকর্মী, সমাজবিজ্ঞানী, অপরাধবিজ্ঞানীসহ সচেতন মহলও এই মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না নিজেও ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ৭২ ঘণ্টা পরে কেন, ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি যখনই অভিযোগ দেবেন, তখনই সেই অভিযোগ পুলিশকে নিতে হবে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনাও আছে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

৭২ ঘণ্টার মধ্যে মামলা আদালতের পর্যবেক্ষণ ধর্ষণ মামলা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রেইনট্রি ধর্ষণ মামলা রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায়