পায়রার ভাঙন ঠেকাতে ৮২৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব
৩ নভেম্বর ২০২১ ১১:৩৩
ঢাকা: পায়রা নদীর ভাঙন রোধে আসছে ৮২৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে খাল খনন, রেগুলেটর মেরামত, পুনঃনির্মাণ, নদী তীর সংরক্ষণ ও বাঁধের ঢাল সংরক্ষণের মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধ ও প্রকল্প এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এছাড়া লবণাক্ত পানির প্রবেশ রোধ করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি পায়রা নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে রাস্তাঘাটসহ প্রায় ৩ হাজার ১৬৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা সমমূল্যের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘বরগুনা জেলাধীন পোল্ডার ৪১/৬এ, ৪১/৬বি ও ৪১/৭ এ পুনর্বাসন এবং বেতাগী শহরসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অংশ বিষখালী ও পায়রা নদীর ভাঙন হতে প্রতিরক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পটি এরই মধ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) বাস্তবায়ন করবে।
বাপাউবো বলছে, উপকূলীয় অঞ্চলকে উচ্চ জোয়ার, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে ষাটের দশকে পোল্ডারাইজেশন করার মাধ্যমে পুরো উপকূলীয় এলাকাকে ছোট ছোট পোল্ডারে বিভক্ত করা হয়। এতে গোটা এলাকা স্থায়ী কৃষি জমিতে পরিণত হয়। কিন্তু প্রতিবছর বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়-সাইক্লোনের আঘাতে উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাপাউবো সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর পায়রা নদীর ভাঙনে গড়ে প্রায় ২৫ মিটার জায়গা ও বিশখালী নদীর ভাঙনে গড়ে প্রায় ২২ মিটার জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়। অথচ পোল্ডারগুলো পুনর্বাসনের জন্য ব্যাপক কোনো পুনর্বাসন কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। এছাড়া সাম্প্রতিককালে বেতাগী উপজেলার পোল্ডার ৪১/৭এ-এর ৯ দশমিক ৬৩০ কিলোমিটার থেকে ১৪ কিলোমিটার এবং সদর উপজেলার পোল্ডার ৪১/৬বি-এর ১৭ দশমিক ৮০০ কিলোমিটার থেকে ২০ দশমিক ৩১৫ কিলোমিটার অংশে অর্থাৎ মোট ৬ দশমিক ৮৮৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশখালী নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। এছাড়াও এই জেলার বরগুনা সদর উপজেলার পোল্ডার ৪১/৬এ-এর ৩ দশমিক ৯০০ কিলোমিটার থেকে ৪ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার এবং ৫ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার থেকে ৫ দশমিক ৯০০ কিলোমিটার অংশে, অর্থাৎ মোট এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পায়রা নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। এ সমস্যা সমাধানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পাউবো গঠিত কমিটির মাধ্যমে সমীক্ষা প্রতিবেদন সম্পাদন করে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১৩ জুন অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে— ৭ দশমিক ৮৮৫ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৩ দশমিক ৫১৫ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ৪২ দশমিক ৫২০ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, ২২ দশমিক ৫০০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, ১৭টি রেগুলেটর নির্মাণ, তিনটি রেগুলেটর মেরামত এবং ৪৪ হাজার ৩৫২টি বৃক্ষরোপণ।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামোগুলো পায়রা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও লোনা পানি প্রবেশ রোধ করা সম্ভব হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর