প্রশাসন একাডেমি: আদেশ স্থগিতে সরকারের আবেদন শুনানি ২১ নভেম্বর
১ নভেম্বর ২০২১ ২১:২৮ | আপডেট: ১ নভেম্বর ২০২১ ২১:৩০
ঢাকা: কক্সবাজারের হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের ৭০০ একর সংরক্ষিত বনভূমি সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপনে তিন মাসের জন্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আবেদনে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চাওয়া হয়েছে।
সোমবার (১ নভেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আবেদনটি শুনানির জন্য আগামী ২১ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। হাইকোর্টে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির।
এর আগে, গত ১১ অক্টোবর আইনজীবী শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবিরের আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশসহ রুল দিয়েছিলেন। একইসঙ্গে বনভূমি ইজারা দেওয়াকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে। চার সপ্তাহের মধ্যে বন ও পরিবেশ সচিব, ভূমি সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
গত ১১ অক্টোবর এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিঞা ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। ওই সময় আদালতের রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী একেএম মনিরুজ্জামান কবির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
রিটকারী আইনজীবী একেএম মনিরুজ্জামান কবির সারাবাংলাকে বলেছিলেন, ‘গত আগস্ট মাসে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে এনে এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছিলাম। তখন আদালত কোন আদেশ দেননি। পরে এ বিষয়ে গত ৩ অক্টোবর জনস্বার্থে আমি নিজে বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করি।’
জানা যায়, বন বিভাগ ও সংসদীয় কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে শুকনাছড়ির সংরক্ষিত বনভূমির ৭০০ একর জমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই বনভূমি ‘রক্ষিত ও পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন’ জমি। সংরক্ষিত ওই বনভূমির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা হলেও প্রতীকী ১ লাখ টাকায় বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। প্রতীকী মূল্য পরিশোধ করায় ইতোমধ্যে ওই জমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বঙ্গবন্ধু একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্টেশনের (বাপা) কার্যালয় নির্মাণের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদফতরের কাছে অনাপত্তিপত্র চায়। সংস্থাটি ওই বছরই ১৪টি শর্তে অনাপত্তিপত্র দেয়। কিন্তু বন বিভাগ ভূমি মন্ত্রণালয়কে লেখা তাদের চিঠিতে জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড় ও পাহাড়ের ঢাল বন্দোবস্তযোগ্য নয় এবং বন বিভাগের ওই জমি বনায়নের জন্য ব্যবহার করতে হবে। ১৯৯০ সালে জারি করা ভূমি মন্ত্রণালয়েরই একটি পরিপত্রে তা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বন আইন অনুযায়ী, এ ধরনের রক্ষিত বনে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ।
বর্তমানে ওই বনভূমিতে ৫৮ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে আছে গর্জন, চাপালিশ, তেলসুর, মোস, কড়ই, বাটনা, ভাদি, বহেরাসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতি। এ ছাড়া বন্য প্রাণীর মধ্যে আছে এশীয় বন্য হাতি, বানর, বন্য শূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখি।
ইতোমধ্যে কক্সবাজারের ৭০০ একর বনভূমির ইজারা বাতিলের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ২০টির বেশি সংগঠন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম