কৃষকদের সম্পৃক্ততা ছাড়া আন্দোলন সফল হবে না: ফখরুল
১২ অক্টোবর ২০২১ ১৩:৩০ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২১ ১৩:৩৫
ঢাকা: কৃষকদের সম্পৃক্ততা ছাড়া গণতন্ত্রের আন্দোলন সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের বর্ধিত সভা উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সবসময় একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, আপনারা (কৃষকদল) এমন একটা জায়গায় কাজ করেন, যেটা দেশের সবচেয়ে বড় অংশ এবং এরাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। এদের কাছে যেতে হবে। তারা যাতে তাদের ন্যায্যমূল্যটা পায়, সে ব্যাপারে আন্দোলন করতে হবে। কৃষি আন্দোলন ছাড়া কখনই সফল হওয়া যাবে না। আজকে আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি, এই গণতন্ত্রের আন্দোলন কখনই সফল হবে না; যদি আমরা কৃষকদের এরসঙ্গে সম্পৃক্ত করতে না পারি। কৃষকদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে। যুগে যুগে কৃষকেরা তাদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করেছে। অতীত ইতিহাস আছে বাংলাদেশে। তেভাগা আন্দোলন করেছে, জোদ্দারদের জোদ্দারি শেষ করার জন্য আন্দোলন করেছে।
সাবেক এই কৃষি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষক দল আমার দল। আমি নিজে দীর্ঘ দিন এ দলের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। ছাত্রজীবন থেকে কৃষি, কৃষক এবং কৃষকদের আন্দোলনের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কৃষকদের স্বার্থের জন্য, তাদের প্রয়োজনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সহায়তায় আমরা অনেকগুলো সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছিলাম। যারা পুরোনো মানুষ আছেন, তারা জানেন আমরা অনেকগুলো আন্দোলনে সফল হয়েছিলাম।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কৃষকদের কৃষি ঋণের সমস্ত সুদ মাফ করে দিয়েছিলেন এবং ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন জায়গায় কৃষকদের জন্য সেচের ব্যবস্থা করেছিলেন। রাজশাহী ও রংপুরে বরেন্দ্র প্রোজেক্ট সূচনা করেছিলেন খালেদা জিয়া। রাজশাহী থেকে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া পর্যন্ত ডিপ টিউবওয়েল, বিদ্যুতের পাম্প এবং সুপেয় পানি বা নিরাপদ পানির ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন। এই বিষয়গুলো কৃষক দলের অবদান। কৃষকদল আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে, সরকারকে বাধ্য করেছে কৃষকদের এই দাবিগুলো মেনে নিতে।’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে ফের যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তখন বেগম খালেদা জিয়া কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ব্লক সুপারভাইজারদেরকে তিনি পদোন্নতি দিয়েছিলেন, মর্যাদা বৃদ্ধি করেছিলেন। মাত্র দুই শতাংশ সুদে মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদনে ঋণের ব্যবস্থা করেছিলেন।’
‘এই সরকার কৃষকদেরকে সব চেয়ে করুণ অবস্থায় নিয়ে গেছে। কৃষকদের মেরুদণ্ড বলতে যেটা বোঝায়, সেটা নেই। একদিকে ঋণে জর্জরিত, অন্যদিকে তারা ফসলের মূল্য পায় না। ধান উৎপাদন করে, ধানের মূল্য পায় না। পরে মধ্যসত্ত্বভোগীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে আজ ৭০ টাকা দরে চাল কিনতে হয়। অথচ কৃষক দাম পাচ্ছে না। প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তেল, পেয়াজসহ সমস্ত মসলা জাতীয় এবং নিত্যপণ্যের মূল্য আকাশচুম্বি হয়ে গেছে’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘কৃষকদলকে থাকতে হবে কৃষকের সঙ্গে, কৃষকদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলতে হবে। সরকারে যেই থাক, যদি আমাদের সরকারও থাকে, তাহলেও কথা বলতে হবে। আমাদের সময় আমরা সেটা করেছি। আমরা কৃষকের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি, আন্দোলন করেছি, দাবি আদায় করেছি। এখন তো কৃষকদের সব চেয়ে বড় সমস্যা। কৃষক দলকে শুধু পোশাকী একটা দল বানাবেন না। কৃষকের কাছে যেতে হবে। কৃষকের কাছে গিয়ে আন্দোলন করতে হবে। তাহলে দেশ উপকৃত হবে, দল উপকৃত হবে।’
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, সহ-সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, যুগ্ম সম্পাদক টিএস আইয়ুব, মোশাররফ হোসেন, দফতর সম্পাদক শফিকুল ইসলামসহ কৃষক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েক শ’ নেতাকর্মী।
সারাবাংলা/এজেড/এএম