অনলাইনে অবৈধ সুদের ব্যবসা চালানো প্রতারক চক্র গ্রেফতার
৭ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৪৫ | আপডেট: ৭ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৪৮
ঢাকা: অ্যাপসভিত্তিক ডিজিটাল মাইক্রোফাইন্যান্সের নামে অবৈধ সুদের ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিএমপি)। এরা হলেন ইমানুয়্যাল অ্যাডওয়ার্ড গোমেজ, আরিফুজ্জামান, শাহিনূর আলম ওরফে রাজীব, শুভ গোমেজ ও মো. আকরাম।
গত ৫ ও ৬ অক্টোবর ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানীর ধানমন্ডি, বনানী এবং মিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা ওয়েববেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে একটি ছাই রংয়ের এলিয়েন গাড়ি, ৯টি মোবাইল ফোন, ৯টি সিম কার্ড, চারটি ল্যাপটপ ও চারটি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) বেলা ১২ টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতরা সরকারি অনুমোদন ব্যতীত থান্ডার লাইট টেকনোলজি লিমিটেড, নিউ ভিশন ফিনটেক লিমিটেড ও বেসিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। আইনগত অনুমোদন ব্যাতীত তারা গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ করছে। গ্রাহকরা ঋণ নেওয়ার জন্য অ্যাপস ইন্সটল করলে গ্রাহকের অজান্তে ক্যালেন্ডারের ইভেন্ট পড়া, গ্রাহকের অনুমতি ব্যাতিরেকে দূর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গ্রাহকের মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিও ধারণ, মোবাইলের কন্টাক্টস পড়াসহ মোবাইলের এক্সাক্ট লাইভ লোকেশন নির্ণয়, ফোনের স্ট্যাটাস এবং তথ্য সংগ্রহ, ফোনে সংরক্ষিত মেসেজ পড়া, পরিবর্তন করার অনুমতি নিয়ে নেয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের পারসোনাল ডাটা সিকিউরিটির চরম হুমকিতে পরে।
তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইন অ্যাপস যেমন; Tkala – Personal Loans Online (Tkala. Thala-0430 ), Cashman (Cashman-0514, Cashman-0326), RapidCash- Quick Online eLoans App, AmarCash-Personal Loans Online, Cashkash-Fast Loans Online, ও CashCash এর মাধ্যমে জামানতবিহীন লোন দেওয়ার নামে চলে মাত্রাতিরিক্ত সুদের কারবার। এ সব অ্যাপসগুলোর সার্ভার চীনে অবস্থিত এবং যেগুলো মূলত চীন থেকে পরিচালিত হয়। কিছু চীনের নাগরিক বাংলাদেশি নাগরিকের সহায়তায় বর্ণিত অ্যাপসগুলোর মাধ্যমে জামানতবিহীন স্বল্প সুদে লোন প্রদান করার নামে চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহক আকৃষ্ট করে। তাদের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে গ্রাহকরা লোন গ্রহণ করার পর স্বল্প সুদের পরিবর্তে উচ্চহারে সুদ প্রদানের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছে।
প্রতারণার শিকার এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা রুজু হয়। এ মামলা তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘প্রতারকরা অ্যাপসগুলো ফেইসবুক, ইউটিউবসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বল্প সুদে জামানতবিহীন ঋণ প্রদানের নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে। তারা মূলত অর্থ সংকটে থাকা স্বল্প আয়ের লোকজন এবং বেকার ছাত্র-ছাত্রীদের টার্গেট করে। টার্গেটকৃত গ্রাহকরা বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত লিংকে ক্লিক করে কিংবা গুগল স্টোর থেকে অ্যাপসগুলো ডাউনলোড করে। এরপর গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র, ফোন নাম্বার, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ফোন নাম্বার ও তাদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। চাহিদা অনুযায়ী আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মাত্রাতিরিক্ত প্রসেসিং ফি নিয়ে এবং উচ্চ হারে সুদ নির্ধারণ করে স্বল্প সময়ের জন্য ৩ থেকে ৭ দিনের জন্য ঋণ প্রদান করে।’
গ্রাহক ৩০০০ টাকার জন্য আবেদন করলে অনুমোদনের পর প্রসেসিং ফি বাবদ ৮১০ টাকা রেখে গ্রাহককে মাত্র ২১৯০ টাকা দেওয়া হয়। ৭ দিন শেষে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয় ৩ হাজার ১৮ টাকা। মেয়াদ শেষে অনাদায়ে প্রতিদিন হিসাবে গ্রাহককে উচ্চহারে সুদ প্রদান করতে হয়। এ ছাড়াও অ্যাপ্লিকেশন ফি বাবদ ১২০ টাকা, ডাটা অ্যানালাইসিস ফি ১৮০ টাকা, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ টাকা এবং সুদ বাবদ ৫ টাকা কেটে রাখার যুক্তি দেখায়। তবে পরিমাণ যত বেশি হবে টাকা কেটে রাখার প্রবণতাও বেশি।
এ ঋণের টাকা গ্রাহককে বিকাশ অথবা নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। প্রতারকদের এ লোভনীয় অফারের ফাঁদে পড়ে অনেকে সর্বস্ব হারায়।
যে কোনো অ্যাপস ইন্সটল করার পর অথবা কোন লিংকে প্রবেশ করার পর ব্যক্তিগত কোনো তথ্য দেওয়ার আগে নিরাপত্তার বিষয়টি ভালোভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য যেখানে-সেখানে শেয়ার না করার অনুরোধ জানান পুলিশের এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম এর তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমানের সার্বিক তদারকিতে ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশ টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্লাহর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।
সারাবাংলা/ইউজে/একে