Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রিফিউজি থাকলে বোধহয় কারও কারও লাভই হয়’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ অক্টোবর ২০২১ ১৭:৫৫ | আপডেট: ৪ অক্টোবর ২০২১ ২১:২৭

ঢাকা: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার কাজ করলেও আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে না বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোনো একটি দেশে শরণার্থী থাকলে বরং অনেক সংস্থার জন্যই উপার্জনের পথ তৈরি হয় বলেও সেসব সংস্থার প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো দেশে শরণার্থী (রিফিউজি) থাকলে সেটাই বোধহয় কারও কারও জন্য ব্যবসা হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তরিক। তবে কোনো কোনো সংস্থার জন্য এটি ব্যবসা। শরণার্থী না থাকলে তো তাদের চাকরিই থাকবে না!’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত রয়েছেন।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি হয়ে শুক্রবার (১ অক্টোবর) রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়েই মতবিনিময় করতেই এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

রোহিঙ্গা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিফিউজি থাকলে কারও কারও জন্য কিছুটা লাভই হয়। তারা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি খুব একটা দেখে না। অনেকের কাছ থেকেই অনেক প্রস্তাবনা পাই— এদের জন্য এটা করা হোক, ওটা করা হোক। আমরা বলি— যা কিছু করার, মিয়ানমারে করেন। সেখানে করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যান। এখানে তাদের (রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী) জন্য যা কিছু করার, আমরা করছি।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যখন এলো প্রথম কয়েক মাস তো তাদের জন্য সবকিছু আমরাই করলাম। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরে যুক্ত হয়েছে। আমাদের কাছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যখনই কোনো কিছু করার কথা বলে, আমরা বলি যা করার মিয়ানমারে করেন। সেখানে হাসপাতাল করেন, স্কুল করেন, ঘরে করে দেন। আমাদের এখানে যা করার আমরা করে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ধারণা— কিছু কিছু শ্রেণির কাছে সবকিছুকেই ব্যবসা মনে হয়। তবে কেউ কেউ তো আন্তরিকও রয়েছে। তাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাই। কিন্তু কেউ কেউ শুধু শুনেই যান, সমস্যা এখানেই।

বাংলাদেশে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯১ সালে একসঙ্গে অনেক রোহিঙ্গা এসেছিল। তখন আলোচনার মাধ্যমে কিছু ফেরত গেল, তিন লাখের মতো থেকে গেল। মুহিবুল্লাহ (উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সম্প্রতি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত) কিন্তু সেই সময়ই দেশে এসেছিল। তারা আর কখনো ফেরত যায়নি। এবারে আরও সাত-আট লাখ রোহিঙ্গা এলো। সব মিলিয়ে ১১/১২ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে রয়েছে। এর আগে তো পাকিস্তানি রিফিউজিদের আশ্রয় দিয়েছি সেই ১৯৪৮ সালেই। তাদের তো আর ফেরতই নিল না। সবাই হয়ত ভুলেই গেছে যে এই বড় অঙ্কের শরণার্থীদের আমরা আশ্রয় দিয়ে পালন করে যাচ্ছি।’

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানো হলে বেশকিছু সমস্যা হবে বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘উখিয়া এলাকা তো পুরো বদলে গেছে। তার চেয়েও বড় কথা, সেখানে এখন সন্ত্রাস-নারী পাচার-শিশু পাচার-মাদক পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অনেকেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি এগুলো থামানোর। এর জন্যও অনেকে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও বলেছি, এদের (রোহিঙ্গা) ফেরত না দিলে এরকম সমস্যা হবে। আমরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে বলছি, এখন আপনারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চাপ দিন।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শুরুতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

গণভবনে প্রান্তে সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। সেখানে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তেও উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। দুই স্থানে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছ থেকেই প্রশ্ন নিয়ে উত্তর দেন সরকারপ্রধান।

সারাবাংলা/টিআর/একে

আওয়ামী লীগ জাতিসংঘ টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন রোহিঙ্গা শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর