আওয়ামী লীগ মানুষের বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছে: ফখরুল
৩ অক্টোবর ২০২১ ১৭:১৬ | আপডেট: ৩ অক্টোবর ২০২১ ১৭:১৮
ঢাকা: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মানুষের বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (৩ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই যে রাষ্ট্র তারা তৈরি করেছে, এই রাষ্ট্র আমাদের রাষ্ট্র নয়। এই রাষ্ট্র কখনই আমরা চাইনি। আওয়ামী লীগ সেই জন্যই মানুষের বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল, আমরা চমৎকার একটি রাষ্ট্র গঠন করব। যে রাষ্ট্রে মানুষের অধিকার থাকবে, মানুষ কথা বলতে পারবে, মানুষের স্বাধীনতা থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে ৯৫ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, সেই ইসলাম ধর্মের ওপর একের পর এক তারা আঘাত হানছে। দাড়ি টুপি পরা মানুষ দেখলেই তারা জঙ্গি বলছে। কত জনকে যে তারা হয়রানি করেছে, কত জনকে যে তারা তুলে নিয়ে গেছে তার হিসাব নেই। এই জঙ্গি শব্দ তুলে তারা পশ্চিমা বিশ্বের সহনুভূতি ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে।’
‘এদের কাছ থেকে যদি আমরা মুক্তি না পাই, তাহলে এই রাষ্ট্রকে আমরা টিকিয়ে রাখতে পারব না। এত দিনকার যে কৃষ্টি, যে ঐতিহ্য, সেটাও আমরা ধরে রাখতে পারব না। আমাদের সন্তানদের জন্য একটা সুস্থ সমাজ আমরা গড়ে তুলতে পারব না’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন যে, বর্তমান সংকট বিএনপির সংকট, বিএনপির সংগ্রাম। সংকট বিএনপির নয়, সংকটটা গোটা জাতির। এই কথা আমাদের বুঝতে হবে এবং জাতিকে বোঝাতে হবে। আজকে গণতন্ত্র নেই, নির্বাচন হয় না। দুর্নীতির জন্য কোনো জবাবদিহিতা নেই। যে যেখানে যেমন খুশি ডাকাতি করছে, চুরি করছে। এর কোনো জবাবদিহিতা নাই। আইন-শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। এই রকম দেশ তো আমরা চাইনি। এ রকম দেশ তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ।’
ই-কমার্স প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে ই-কমার্স নামে একটি শব্দ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ই-কমার্স হলো- যারা অনলাইনে কেনা-বেচা করে। শুধু ইভ্যালি নয়, প্রায় ১১/১২টি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে নিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে সরকার আগে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে হত্যা, শিশু হত্যা, নির্যাতন এমনভাবে বেড়েছে যে, আগে আমরা কখনও চিন্তা করতে পারিনি। আজ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি? তারা লোকজনদের তুলে নিয়ে যায়, তারপর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। আমরা হিসাব করে দেখেছি- বিএনপির পাঁচশ’র উপর মানুষ গুম হয়ে গেছে। আমাদের ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ প্রায় ৫০০ নেতাকর্মীকে গুম করে ফেলেছে। বিনা বিচারে পুলিশ হেফাজতে হত্যা করা হয়েছে।’
‘এই বিষয়গুলো আগে কখনও দেখিনি। গুম শব্দের সঙ্গে আমরা পরিচিতই ছিলাম না। এগুলো আমরা ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে দেখেছি। কিন্তু বাংলাদেশে কখনও শুনিনি। বাংলাদেশে গুমের কালচার এরা (সরকার) চালু করেছে’— বলেন মির্জা ফখরুল।
গোটা বাংলাদেশ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমরা নেতৃত্ব দেব। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্তরীণ অবস্থায় রেখেছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তার চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার দরকার। সেটাও তারা অনুমতি দিচ্ছে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা। গত নির্বাচনের সময় গায়েবি মামলা দেওয়া হলো। কোনো ঘটনাই ঘটেনি, মামলা দিয়ে দিয়েছে। এই মামলাগুলো তারা দিয়েছে শুধুমাত্র বিরোধীদলকে দমন করে বেআইনিভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য। তারা আগের রাতেই নির্বাচন করেছে। নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা নির্বাচন করতে চান। কারণ, নির্বাচন না দেখালে বিশ্বের কাছে স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হয়ে যাবেন। তাই দেখানোর জন্য একটা নির্বাচন করতে চান। যে নির্বাচন করবেন, সেখানে ভোটাররা যাবে না, আপনারা ইভিএম মেশিন দিয়ে ভোট দিয়ে দেবেন। এই ধরনের নির্বাচন এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না।’
ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ মাওলানা নেছারুল হকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম
আওয়ামী লীগ টপ নিউজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শত্রু