কে হচ্ছেন জাপার নতুন মহাসচিব
২ অক্টোবর ২০২১ ২২:৫৪ | আপডেট: ২ অক্টোবর ২০২১ ২৩:১৩
ঢাকা: জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মৃত্যুতে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) শূন্য হয়েছে মহাসচিব পদ। এই অবস্থায় কে হতে পারেন পরবর্তী মহাসচিব- তা নিয়ে চলছে আলোচনা। নতুন মহাসচিব হওয়ার আশায় কেউ কেউ তোড়জোড় শুরু করেছেন, কেউ আবার উচ্চপর্যায়ে লবিং করছেন বলে জাপা সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের চেয়ারম্যান তার মনোনীত ব্যক্তিকে মহাসচিব পদে নিয়োগ দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের হাতে রয়েছে সর্বোচ্চ ক্ষমতা।
জাপা নেতাদের মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে চারজনের নাম। তারা হলেন- মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ, রুহুল আমিন হাওলাদার, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও সাইদুর রহমান টেপা। এর মধ্যে মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ ও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী একটি ‘বিশেষ দলের আস্থাভাজন’ হিসেবে পরিচিত। মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ আগে একবার মহাসচিব ছিলেন। জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের তাকে সরিয়ে বাবলুকে মহাসচিব করেন। এবার রাঙ্গাঁ সুযোগ না পেলে ওই ‘বিশেষ দলের গ্রিন সিগন্যালে’ নতুন মহাসচিব হতে পারেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী পেশায় একজন আইনজীবী। পাশাপাশি তিনি গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য। ২০১৮ সালে শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এদিকে এরশাদ চেয়ারম্যান থাকাকালে নানা অনিয়মের কারণে রুহুল আমিন হাওলাদার বাদ যান। ভাগ্য ভালো হলে তিনিও হতে পারেন মহাসচিব। এ ছাড়া অতিরিক্ত মহাসচিব সাইদুর রহমান টেপাও এগিয়ে থাকার তালিকায় রয়েছেন।
মহাসচিব পদে আলোচনায় একাধিক নাম থাকলেও জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১ (১) ক উপ-ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে একমাত্র চেয়ারম্যানই একচ্ছত্র ক্ষমতাবলে নিয়োগ দেবেন মহাসচিব। সেক্ষেত্রে কে হতে পারেন পরবর্তী মহাসচিব তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব সাইদুর রহমান টেপা বলেন, ‘মহাসচিব নিয়োগের বেলায় সিনিয়র-জুনিয়রের বিধান জাতীয় পার্টিতে নেই। এক্ষেত্রে জাপা চেয়ারম্যান তার ক্ষমতাবলে যে কাউকে মহাসচিব করতে পারেন।’ জাপা চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের প্রতি অবিচল আস্থা রয়েছে বলেও জানান সাইদুর রহমান টেপা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের আশ্বাস দিয়ে আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সালে মহাসচিব পদ থেকে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রুহুল আমিন হাওলদারের জায়গায় মহাসচিব পদে মশিউর রহমান রাঙ্গাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময় মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রেসিডিয়াম সদস্যের পাশাপাশি জাপা চেয়ারম্যান অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন রাঙ্গাঁকে।
আরও পড়ুন:
- জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু আর নেই
- জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর দাফন সম্পন্ন
- জিয়াউদ্দিন বাবলুর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর গভীর শোক
- জাপা মহাসচিবের মৃত্যুতে বিএনপি মহাসচিবের শোক
- জিয়াউদ্দিন বাবলুর মরদেহে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন দেওয়ার আশ্বাসে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেন রুহুল আমিন হাওলাদার। বিষয়টি দলের হাইকমান্ড জানতে পারায় মহাসচিবের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ২০০২ সালে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মনোনীত হন। ১১ বছর পর ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল তাকে মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়াও তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মুখপাত্র ছিলেন।
২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাওলাদার পটুয়াখালী-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ায় তিনি ঋণখেলাপি হয়েছেন। ফলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়।
এরশাদ মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির নবম কাউন্সিলেও মশিউর রহমান রাঙ্গাঁই মহাসচিব থাকেন। যদিও কাউন্সিলের বছর না পেরোতেই মশিউর রহমান রাঙ্গাঁকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার জায়গায় জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে নতুন মহাসচিব ঘোষণা করা হয়।
ওই সময় মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে যেকোনো সময় পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বিশেষ করে যাদের মহাসচিব করা হয়, তাদের যেকোনো সময় ব্যাগ নিয়ে রেডি থাকতে হয়।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে/পিটিএম