প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় তেজতুরী বাজারের বাসার বিস্ফোরণ
২ অক্টোবর ২০২১ ০২:৩৬ | আপডেট: ২ অক্টোবর ২০২১ ১০:৫৪
ঢাকা: রাত ৯টা বেজে ৭ মিনিট। হঠাৎ বিকট আওয়াজে প্রকম্পিত আমার বাসার বিল্ডিং। সকলেই ছোটাছুটি করছিল…। প্রথমে বারান্দায় বৌ এবং বাচ্চাকে পাঠিয়ে কি হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করি। ঘরের মেইন দরজা সাহস করে খুলি। খুলতেই শুনতে পেলাম চিৎকার। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন অনেক গরম একটা ভাব লাগে আমার চোখে এর সাত মিনিট পরে কারও আওয়াজ শুনতে পাই… । বলছিল, ভাই কে কে আছেন? নামেন… এরপরেই শুনতে পেলাম কান্নার আওয়াজ ও ডাকাডাকি
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার তেজতুরী বাজারের গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের ঘটনার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার বর্ণনা এভাবে দিচ্ছিলেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী। রেজোওয়ানুল মজেজ নামে এই প্রত্যক্ষদর্শী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে বর্ণনা দেন গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের পরে তার অভিজ্ঞতার।
শুক্রবার (১ অক্টোবর) রাত রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেন তেজগাঁও থানা পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রেজোয়ানুল মজেজ বলেন, আমি বিল্ডিংয়ের পাঁচ তলায় থাকি। আমাদের বিল্ডিংয়ের তিন তলায় (আমি থাকি ৫তলায়) এক ইউনিটে ব্যাচেলর থাকে। তারা ঠিক আমার ইউনিট বরাবর নিচ তলায় থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে গ্যাস সাপ্লাই এর সমস্যা অনেকদিনের। বিকেল তিন থেকে চারটা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। তাই হয়তো তিন তলায় তারা গ্যাসের সিলিন্ডার এনে রেখেছিল বুয়ার সুবিধার জন্য। এত বিকট আওয়াজে তা বিস্ফোরণ হয়েছে যে, দ্বিতীয় রুম পর মূল ফটক এবং অন্যরুমের খাট তা চুরমার করে সিঁড়িতে ফেলে দিয়েছে। অন্যান্য ইউনিটের জানালার গ্লাসও পুরো চুরমার হয়ে গেছে।
বিষ্ফোরণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে রেজোয়ানুল বলেন, ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা..। রাত ৯টা বেজে ৭ মিনিট তখন। হঠাৎ বিকট আওয়াজে প্রকম্পিত আমার বাসার বিল্ডিং। সকলেই ছোটাছুটি করছিল…। প্রথমে বারান্দায় বৌ এবং বাচ্চাকে পাঠিয়ে কি হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করি। ঘরের মেইন দরজার সাহস করে খুলি। খুলতেই শুনতে পেলাম চিৎকার।
তিনি বলেন, দরজা খোলার পরে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন অনেক গরম একটা ভাব লাগে আমার চোখে। কিছুটা ভয়ে দরজা লাগিয়ে ফেলি।
এর সাত মিনিট পরে কারও আওয়াজ শুনতে পাই… । বলছিল—ভাই কে কে আছেন নামেন… এরপরেই শুনতে পেলাম কান্নার আওয়াজ ও ডাকাডাকি। বৌ-বাচ্চাকে একটু স্বাভাবিক করে তাদের যার যা পরনে ছিল সে অবস্থাতেই নামিয়ে দিলাম সবার সঙ্গে। আমি রয়ে গেলাম ঘরে… অন্তত তালা দিতে হবে এই ভেবে। ভয়ে আইপিএসও বন্ধ করে দেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিল্ডিংয়ে থাকা দুইজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে পাঠিয়েছে এলাকার লোকজন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি তে আমরা ভালোভাবে নিচে অবশেষে আপুর বাসায় চলে এসেছি। কৌতুহলী মানুষের ভিড়ে নিজের বাড়িতে নিজেই ঢুকতে পারছি না।
আলহামদুলিল্লাহ..! সকলেই দোয়া করবেন। নিশ্চিত বড় কিছু হতে পারতো— যোগ করেন রেজওয়ানুল।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার দেওয়ান আজাদ বলেন, রাত ৯ টার দিকে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে কোনো আগুন পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে কিছু একটা বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেবিষয়ে পুলিশ কাজ করছে। আর সেখান থেকে দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের টিম কাজ করছে।
অন্যদিকে তেজগাঁও থানা পুলিশ জানিয়েছে, সম্ভবত সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বোম ডিসপোজাল ইউনিটসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। বিস্তারিত তদন্ত শেষে জানানো হবে। কয়েকজন আহত হলেও আমরা দুজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এছাড়া ওই ভবনের সকল বাসিন্দাদের নিরাপদে রাখতে অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। এই মুহুর্তে ভবনটি খালি রাখা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/এসবি