অবশেষে ইভানার বাবার মামলা নিল পুলিশ
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:২৫ | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০০:৫১
ঢাকা: ইংরেজি মাধ্যম স্কুল স্কলাসটিকার ক্যারিয়ার গাইডেন্স কাউন্সিলর ইভানা লায়লা চৌধুরীর (৩২) মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে মামলা নিয়েছে পুলিশ। শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ইভানার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন। মামলা নম্বর ৪১।
মামলায় দুই জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- মৃত ইভানার স্বামী আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান রুম্মান ও ইমপালস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক মুজিবুল হক মোল্লা।
থানা থেকে বেরিয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. সরোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘৩০৬ ও ১০৯ ধারায় দুই জনের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘গতকাল ফিরে গেলেও আজ তাদের মামলা রুজ্জু করা হয়েছে। মামলায় দুই জনকে আসামি করেছেন বাদী। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
থানা থেকে বেরিয়ে ইভানার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল মামলা না নেওয়ায় হতাশ হয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। আজ থানা থেকে ফোন করেছিল ওসি। উনাদের ডাকে এসেছি। আজ মামলা নিয়েছে। এখন সুষ্ঠু তদন্তের আশা করছি।’
এর আগে, সন্ধ্যা ৭টা ২০মিনিটে ইভানার বাবা আমান উল্লাহ চৌধুরী তার আইনজীবী এম. সরোয়ার হোসেনকে নিয়ে থানায় প্রবেশ করেন।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও ইভানার বাবার মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। এ ঘটনায় আগে হওয়া অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে বাবার দেওয়া অভিযোগ তদন্ত করবে- পুলিশ এমনটা জানিয়ে তাকে বিদায় করে দেয়।
ওই দিন আইনজীবী এম. সরোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘থানা নতুন করে মামলা নিল না। আমরা সিনিয়র আইনজীবী ও পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেব।’
আরও পড়ুন
- ইভানার মৃত্যুর দায় কার
- অবশেষে মামলার সিদ্ধান্ত ইভানার পরিবারের
- ইভানার জন্য বন্ধু-সহকর্মীরা কালো ব্যাজ পরে থানায়
- স্কলাসটিকা কর্মকর্তা ইভানার মৃত্যুর নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য
- মামলা নেয়নি শাহবাগ থানা, আদালতে যাবে ইভানার পরিবার
- ইভানার মৃত্যুরহস্য: মামলা নিয়ে পরিবারের রহস্যময় আচরণ
- ইভানাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ‘প্রেমিকা’র সঙ্গে কথা বলতেন রুম্মান
- ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আবেদন
- ইভানার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে থানায় আইনজীবীরা
এদিকে একই দিন রমনা জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হারুনুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইভানার বাবার দেওয়া মামলার আবেদন আমরা নিয়েছি। এটি অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে অ্যাড করে তদন্ত হবে। তদন্তে আত্মহত্যা প্ররোচণাজনিত কোনো উপাদান পাওয়া গেলে সেটি নিয়মিত মামলা হিসেবে চার্জশিট দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ডিসি প্রসিকিউশনের সঙ্গে কথা বলব। আইনি বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার পর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপশনও রয়েছে। এছাড়া তারা আদালতেও যেতে পারেন।’
এর আগে, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর পরীবাগের (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পেছন) নকশী প্যালেসের দুটি ভবনের মাঝখানে মেলে ইভানা লায়লা চৌধুরীর নিথর দেহ। ৯৯৯ এর কল পেয়ে শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর তার ময়নাতদন্ত হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে বনানীতে ইভানার মরদেহ দাফন করা হয়।
শুরুতে সবকিছু ঢাকা পড়লেও সারাবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে ইভানার মৃত্যুর চাঞ্চল্যকর তথ্য। বেরিয়ে আসে ইভানার মৃত্যুর পেছনে স্বামীর অপকর্মের কাহিনী। নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। এমনকি ইভানাকে প্রতিদিন ওভারডোজ ঘুমের ওষুধ দেওয়া হতো বলেও জানা যায়। হতাশার কথা ইভানা তার বন্ধু, শিক্ষক ও সহকর্মীদের জানিয়ে পরামর্শও চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম