‘নদী তীরের সকল অবৈধ স্থাপনা সরাতে হবে’
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:১৭ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:০৯
ঢাকা: রাজধানীর চারপাশের বিভিন্ন নদ-নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাসহ অন্যান্য স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, জনগণ ও অর্থনীতির কথা চিন্তা করে তাদের সময় দিয়ে সামান্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য নদী তীর দখল করে থাকা সকল স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বিএসআরএফ’র সংলাপে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দিনের পর দিন দখল হয়ে যাওয়া নদ- নদীর তীরের জমি উদ্ধার করছে সরকার। ২০০৯ সাল থেকে এই কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন বেগ পেতে হয়েছে এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিভিন্ন মামলার কারণে এখনও এ উদ্যোগ শতভাগ বাস্তবায়ন করা যায়নি।
তিনি বলেন, নদ- নদীর তীরের ভূমি উদ্ধারের পাশাপাশি এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল। সে অনুযায়ী অবৈধ দখলে থাকা রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীর তীর উদ্ধারের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু সে কাজ করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেখা যাচ্ছে কেউ জমি কিনে বাসা-বাড়ি তুলে ফেলেছে। এখন যে ব্যক্তি টাকা খরচ করে বাড়ি করেছেন তার তো দোষ নেই। তাছাড়া অনেক ভারি শিল্প-কারখানা রয়েছে নদীর পাড়ে। সেগুলো সরাতে সময় লাগবে। সেজন্য তাদের কিছুটা ছাড় দিয়ে আমরা সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছি যেন তারা আস্তেধীরে কারখানা স্থানান্তর করেন।
তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় মানুষের কাছে খুব বেশি পরিচিত ছিল না। এ মন্ত্রণালয় যতটা বিকশিত হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমাদের নৌপথ সচল করতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়েছে। ইশতেহার অনুযায়ী ১০ হাজার নৌ পথ তৈরির কথা। আমরা ইতোমধ্যে ৩ হাজার করেছি। এ কারণে বন্যা কিংবা অতিবৃষ্টিতে এখন বেশি প্লাবিত হয় না। দশ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে জলাবদ্ধতা কমে আসবে, কমে যাবে নদ- নদীর ভাঙন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যমুনা অর্থনৈতিক করিডোর করব। তার সমীক্ষা শিগগিরই শুরু হবে। এটা করতে পারলে নদ-নদী ভাঙন কমে আসবে। দুই ভাগে এটি বাস্তবায়ন হবে। এই উদ্যোগে জমি সংগ্রহ করে একটি সিটি গড়ে তোলা হবে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে নৌ পরিবহন খাত অপরিসীম উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নৌ বন্দরগুলোকে অনেক সক্ষম করে গড়ে তোলা হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে বে-টার্মিনাল করা হবে। এটা করা গেলে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ নোঙর-বহিঃনোঙর করতে পারবে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল গভীর সমুদ্রবন্দর করা। এরই মধ্যে মাতারবাড়িতে সেটা চলছে। এ প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। এটা ২০২৪ সালে শেষ করতে পারব। যদিও সেখানে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম চলছে। এর বাইরে মোংলা দেড়শো কিলোমিটার পশুর নদীর চ্যানেল ড্রেজিং করা হবে। ছয় লেন বিশিষ্ট রাস্তা হবে। ঘসিয়াখালী চ্যানেলটি ২০১১ সাল থেকে খনন করে তা ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, পায়রা বন্দর ২০১৩ সালে ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়। ২০১৬ সালে কাজ শুরু হয়। সেখানে ড্রেজিং চলছে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের পায়রাকে ঘিরে অর্থনৈতিক হাব তৈরি হয়েছে। সেনা ক্যাম্প তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে আরো গতি আসবে সব কিছুতে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, একসময় দেশে একটা মাত্র মেরিন একাডেমি ছিল। বর্তমান সরকার চারটা মেরিন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছে। শিপিং করপোরেশনে ২টি মাত্র জাহাজ ছিল, এখন সরকার ছয়টি সংগ্রহ করেছে। বাল্ক জাহাজ পেতে যাচ্ছি, কন্টেইনার ভেসেলের জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে,তাও পেয়ে যাবো। দেশে ক্রস ভেসেল ছিলোনা। আমরা আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ক্রুস জাহাজ সংগ্রহ করতে যাচ্ছি ২০২৩ সালের শেষের দিকে। সেখানে থাকবে হ্যালিপ্যাডও।
মন্ত্রী জানান, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত নৌপথটি নৌ চলাচলের উপযোগী করতে ৩ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ঢাকার শ্মশানঘাট, চাঁদপুর, বরিশালের নৌ-ঘাট সংস্কার করা হবে। ঢাকা-কোলকাতা নৌ চলাচলে জেটি তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ২৩টি নতুন ফেরি দেওয়া হয়েছে বিআইডব্লিউটিসিতে। দক্ষ নাবিক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাদারিপুর, বরিশাল, কুড়িগ্রামে নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলব। চিলমারিতে ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে বন্দর করা হয়েছে। নৌ প্রোটকল ঘোষণা করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক নদীবন্দরে পরিণত হবে।
করোনাকালে অর্থনৈতিক ধারা অব্যাহত রাখতে নৌ পরিবহন খাত ভূমিকা রাখছে বলেও উল্লেখ করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ