কাঠ-শুঁটকি-আচারে ইয়াবা আনত নুরুল
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৪৭ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:২১
ঢাকা: ১৩০ টাকা দিন হাজিরা চুক্তিতে ২০০১ সালে টেকনাফ কাস্টমসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেন নুরুল ইসলাম (৪০)। সেখানে চাকরি করেন ২০০৯ সাল পর্যন্ত। আর সেখানে চাকরিরত অবস্থায় গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে শুরু করেন অর্থ উপার্জন। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা কাঠ, শুঁটকি ও বরই আচারের মাধ্যমে নিয়ে আসতেন ইয়াবা। এভাবে গত ২০ বছরে টাকার কুমিরে পরিণত হন নুরুল ইসলাম। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গল (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
র্যাবের পরিচালক বলেন, ‘টেকনাফ বন্দরের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামকে গ্রেফতারের সময় তিন লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট, তিন লাখ ৮০ হাজার মিয়ানমার মুদ্রা, চার হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং নগদ দুই লাখ এক হাজার ১৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ‘নুরুল ইসলাম ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে দৈনিক ১৩০ টাকা হারে কম্পিউটার অপারেটর পদে চুক্তিভিত্তিক চাকরি পান। বন্দরে চাকরির অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে তিনি চোরাকারবারী, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালি ইত্যাদির কৌশল রপ্ত করেন। এক পর্যায়ে নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে তিনি বন্দরে বিভিন্ন রকম দালালি সিন্ডিকেটে যুক্ত হন। এমনকি একটি সিন্ডিকেটও তৈরি করেন। এর পর ২০০৯ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ওই সময় তারই আস্থাভাজন একজনকে ওই কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু দালালি সিন্ডিকেটটির নিয়ন্ত্রণ রাখেন নিজের হাতে। এভাবে তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।’
আরও পড়ুন:
- কম্পিউটার অপারেটর থেকে ৫০০ কোটি টাকার মালিক!
- ‘শত কোটি টাকার মালিক’ সাবেক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল আটক
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার নুরুল টেকনাফ বন্দর কেন্দ্রিক দালালি সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তার সিন্ডিকেটের ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। যারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালি কার্যক্রম করে থাকে। এই সিন্ডিকেটটি পণ্য খালাস ও পরিবহন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথে অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। সিন্ডিকেটের সহায়তায় সে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কাঠ, শুঁটকি মাছ ও বরইয়ের আচার আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসত। চক্রটির সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বর্হিগমন নিয়ন্ত্রণ করতো।’ গ্রেফতারকৃতের সঙ্গে চিহ্নিত মাদক কারবারীদের যোগসাজশ ছিল বলেও জানান তিনি।
র্যাব জানায়, নুরুল ইসলাম অন্যান্য অবৈধ পণ্যের কারবারের জন্য হুন্ডি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমন্বয় এবং চতুরতার সঙ্গে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েজ কারসাজি করতেন। অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে তিনি বেশকয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এর মধ্যে এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল স্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ অন্যতম। ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে তার ছয়টি বাড়ি এবং ১৩টি প্লটের তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে ৩৭টি বাড়ি, প্লট ও বাগানবাড়ি রয়েছে। তার অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৪৬০ কোটি টাকা। তার নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টও রয়েছে।
র্যাবের মুখপাত্র আরও জানান, বর্তমানে নুরুল একটি জাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছিলেন। ঢাকার সাভারে একটি বিনোদন পার্কে তার বিনিয়োগও রয়েছে বলে জানা গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, ‘তার বিষয়ে আরও তদন্ত হবে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার সঙ্গে আরও যারা জড়িত আছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম