‘মুখস্থ নির্ভরতার বদলে নতুন শিক্ষাক্রম হবে আনন্দময়’
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৫২ | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:৪০
ঢাকা: প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। এরইমধ্যে নতুন সে রূপরেখায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুখস্থ নির্ভরতার বদলে নতুন শিক্ষাক্রম আনন্দময় হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
দেশের শিক্ষা বিষয়ক নতুন নীতিমালার তথ্য তুলে ধরে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
ডা. দীপু মনি বলেন, প্রাথমিক থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এর আগের যতগুলো শিক্ষাক্রম ছিল, সেগুলো একটু আলাদা ছিল। কিন্তু আমরা বোধ করেছি- আমাদের একজন শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিকে প্রবেশের মাধ্যমে প্রাথমিক শেষ করে মাধ্যমিকে যাচ্ছে। এই যে এক স্তর থেকে আরেক স্তরে যাওয়া- এই প্রক্রিয়াটা যেন খুব সহজ হয়, মাঝে যেন ছেদ না পড়ে, যেন গ্যাপ না হয়, সে ব্যবস্থাই থাকছে নতুন শিক্ষাক্রমে।
তিনি বলেন, শিক্ষাক্রমকে আমরা সিমলেস ট্রানজেশন (বাধাহীন রূপান্তর) করতে চেয়েছি। সে লক্ষ্যে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে যারা শিক্ষাক্রম তৈরি করেন, সেসব বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টিম দীর্ঘ সময় ধরে একসঙ্গে কাজ করেছেন। পুরো শিক্ষাক্রমে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত যেন একটি ধারবাহিকতা থাকে তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, পুরো শিক্ষাই যেন আনন্দময় হয়, সে পরিবেশ সৃষ্টি করাই নতুন শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমানোর কথা বলেছেন। মুখস্থ নির্ভরতা কমিয়ে অভিজ্ঞতা ও কার্যকরভিত্তিক ব্যবস্থা রাখা হবে। সেটা হতে পারে নানা অ্যাক্টিভিটি। শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা ও নানা সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে তাদের পাঠদান। শিক্ষার্থীরা যেন অধিকাংশ পাঠদান শ্রেণিকক্ষেই শেষ করতে পারে। বাড়ির কাজ কমাতে হবে। তারা যেন নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারে। আমরা দেখি শিশুদের বাড়িতেও অনেক পড়ার চাপ নিতে হয়। এতে শিশুদের মানসিক চাপ বাড়ে, সেটা কমাতে হবে।
আরও পড়ুন: ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা নয়, প্রথম পাবলিক পরীক্ষা মাধ্যমিকে
দীপু মনি বলেন, কোনো নির্দিষ্ট স্তরে আমরা যে শিক্ষা ও পারদর্শিতা চাই, তা একজন শিক্ষার্থী যেন অর্জন করতে পারে। সেজন্য সনদের ব্যবস্থা করা। সনদের জন্য শিক্ষা নয়। জীবন-জীবিকার জন্য শিক্ষা। প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতাকে আমরা যোগ্যতা বলছি, এগুলো যেন ঠিক থাকে। আমদের মূল ভিত্তি হবে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের চার মূল নীতি। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত চেতনার প্রতিফলন থাকবে নতুন শিক্ষাক্রমে।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী বছর থেকে এ শিক্ষাক্রমের পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন করা হবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১০০ প্রতিষ্ঠানে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে মাধ্যমিকের ১০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও থাকবে। ছয়মাস মাস পরীক্ষামূলক চালানোর পর ২০২৩ সাল থেকে সারাদেশে নুতন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হবে। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম চালু হবে, আর মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে। তবে পরীক্ষামূলকেভাবে প্রথম শ্রেণি এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথমে বাস্তবায়ন করা হবে।
আমাদের হাতে সময় কম, তাই ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন শুরু হবে। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, একটি একটি করে শ্রেণি বাড়বে। এই রূপরেখা বাস্তবায়নে যা যা দরকার সে বিষয়ে আমরা বলেছি। প্রধানমন্ত্রীও এতে অনুমোদন দিয়েছেন। এজন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস
টপ নিউজ শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষাক্রম হবে আনন্দময় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি