লালমনিরহাটে মৃত ব্যক্তির ভাতা যায় চেয়ারম্যানের নম্বরে!
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:২০ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৩৭
লালমনিরহাট: সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠির জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির মাধ্যমে মাসিক ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করে সরকার। দুর্নীতি রোধে সম্প্রতি তা ডিজিটালাইজডও করা হয়েছে। তারপরও লালমনিরহাটের আদিতমারীতে এসব ভাতা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি প্রকল্পের আওতায় বয়স্ক ও বিধবাদের জন্য প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে এবং অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হয়। আগে সরাসরি ব্যাংকে টাকা দেওয়া হলেও সম্প্রতি বিকাশে ভাত দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এর সুযোগে কতিপয় অসাধু ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান সুফল ভোগীর নম্বরের পরিবর্তে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নম্বর দেন। ফলে দুঃস্থদের অর্থ চলে যায় প্রভাবশালীদের দখলে। এমনকি মৃত ব্যাক্তির নামের টাকাও নিচ্ছেন কেউ কেউ।
গত ৬/৭ মাস আগে মারা যান মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া দোড়ার ব্রিজ এলাকার আলু ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমানের মা বয়স্কভাতাভোগী হাজরা খাতুন। মৃত্যুর পরেও গত জুন মাসে দুই দফায় তাকে বিকাশে ৪ হাজার ৫১০ টাকা দেওয়া হয়। তবে এ টাকা চলে যায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরীর ব্যক্তিগত (০১৭১২৮৫৫***) নম্বরে। ফলে পাসবুক তথ্যানুযায়ী মৃত হাজরা খাতুনের টাকা পাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান।
হাজরার পুত্রবধূ সাবিনা বেগম বলেন, ‘আমার শ্বাশুরি ৬/৭ মাস আগে মারা যান। এরপরেও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিকাশ নম্বর চাইলে আমরা দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত টাকা পাইনি।’
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এ নম্বরটি (০১৭১২৮৫৫***) এখন ব্যবহার করি না। তাই টাকা এসেছে কি না জানা নেই। নম্বরটি বিকাশ করাও ছিল না। সিমটি অনেকদিন আগে ফেলে দিয়ে নতুন সিম ব্যবহার করছি।’
উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের সবদল বুড়িরঝাড় গ্রামের নবির হোসেনের স্ত্রী আলীমন নেছার বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন কয়েক বছর ধরে। সম্প্রতি বিকাশ নম্বর চাইলে তারা ০১৭৮৭৭০২*** নম্বরটি ইউপি সদস্যের মাধ্যমে পরিষদের পাঠান। কিন্তু তার নম্বরটি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধানের ব্যাক্তিগত ০১৭১০৮৭০*** নম্বরটি। আর এ নম্বরে আলীমন নেছার বয়স্কভাতার ৫০৩ টাকা গত ১২জুন রাত ১১টায় ৫০ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে পাঠানো হয়েছে বলে পাসবুক তথ্যে জানা গেছে।
তবে ভাতার টাকা না পেয়ে আলীমন নেছা বলেন, ‘সাঈদ মেম্বর বিকাশ নম্বর চেয়েছিল, দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো টাকা পাইনি। চেয়ারম্যান বলেছে অফিসের লোকজন না কি মোবাইলে আমার টাকা মেরে দিয়েছে।’
তবে সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘নম্বরটি আমার ঠিক আছে কিন্তু বিকাশ করা নেই এবং টাকাও আসেনি।’ ইউনিয়নের অসংখ্য লোক এখনও ভাতা পায়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
ভাতা পাননি বুড়িরঝাড় গ্রামের প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমান। যদিও তার ভাতা বাবদ গত ২৬ জুন ৬ হাজার ৭৯৭ টাকা চলে যায় ০১৪০৫৫৪১*** নম্বরে। আর এ নম্বরটি ওই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাঈদের। তবে ইউপি সদস্য সাঈদ বলেন, ‘এটি আমার নম্বর নয়। প্রতিবন্ধী আব্দুর রহমানের ভাতার তালিকায় নম্বরটি দেখেছি।’
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহেরবানু ও তার স্বামী সাবেক গ্রাম পুলিশ আজিজুর রহমান দুই জনে সুস্থ হলেও ক্ষমতার প্রভাবে দু’জনই পাচ্ছেন অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা। আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমার স্ত্রী ধবল রোগী, আমি ডায়াবেটিস রোগী। তাই সমাজকল্যাণ মন্ত্রীকে বলে ভাতাটা করে নিয়েছি।’
এভাবে পুরো উপজেলার সুফলভোগীদের নামের অনুকূলে ৩২ জন ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের ব্যাক্তিগত নম্বর রয়েছে। টাকা না পাওয়া ভাতাভোগীদের নামের অনুকূলে ব্যবহৃত বিকাশ নম্বগুলো কোন জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে তা দ্রুত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আদিতমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রওশন আলী মন্ডল বলেন, ‘ভাতাভোগীর নম্বর পরিবর্তন করে যারা নিজের বা পরিবারের নম্বর দিয়ে টাকা নিয়েছেন। তিনি আমার অফিসের হোক বা জনপ্রতিনিধি হোক। তদন্ত করে অবশ্যই বিধিমত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমও
চেয়ারম্যানের নম্বর টপ নিউজ ভাতা বিতরণে অনিয়ম মৃত ব্যক্তির ভাতা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী