খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মানতে হবে ১৯ নির্দেশনা
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:৪৮ | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১২:১৭
দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিম্নমুখী থাকায় স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এটিও জানানো হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে কঠোরভাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হলে কোন বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে, সে বিষয়ে ১৯ দফা নির্দেশনাও জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।
গত ৫ সেপ্টেম্বর মাউশির ওয়েবসাইটে স্কুল-কলেজ খুলতে পালনীয় এই ১৯ দফা নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়েছে। মাউশি বলছে, গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রস্তুত করতে এই ‘গাইডলাইন’ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করায় স্কুল-কলেজ খোলার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিতে এই ১৯ দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
যা আছে ১৯ দফা নির্দেশনায়
১) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কোডিড-১৯ সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয়গুলো ব্যানার বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে;
২) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তাপমাত্রা মাপতে হবে ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে;
৩) শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়াতে প্রতিষ্ঠানের সবগুলো প্রবেশমুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটিমাত্র প্রবেশমুখ থাকলে একাধিক প্রবেশমুখ তৈরির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে হবে;
৪) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে;
৫) শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে, সে বিষয়ে শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী ব্রিফিং দেওয়ার ব্যবস্থা প্রথম দিনেই করতে হবে। এ বিষয়ে মাউশির তৈরি করা ভিডিওগুলো দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে;
৬) প্রতিষ্ঠানের একটি রুমকে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন রুম হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে;
৭) প্রতিষ্ঠানের সব রুম, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ ও আঙিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে;
৮) প্রতিষ্ঠানের সব ওয়াশরুম নিয়মিত ও সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে;
৯) শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারী ও অভিভাবকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের সময় সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতে হবে;
১০) প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী সঠিকভাবে মাস্ক (সম্ভব হলে কাপড়ের মাস্ক) পরছে— এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে;
১১) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার এমন ব্যবস্থা রাখতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ঢোকার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে পারে;
১২) শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে;
১৩) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সেটি তা নিশ্চিত করতে হবে;
১৪) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করতে হবে;
১৫) প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে;
১৬) স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে;
১৭) প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে;
১৮) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত মেরামত, বৈদ্যুতিক মেরামত ও পানি সংযোগের মেরামত শেষ করে রাখতে হবে; এবং
১৯) প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
এর আগে, রোববার বিকেল ৩টা থেকে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি ব্রিফিংয়ে বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর পঞ্চম ও দশম শ্রেণির পাঠদান প্রতিদিন হবে। বাকি শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হবে সপ্তাহে এক বা দুই দিন। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে সবাইকে।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, স্কুল-কলেজ খুললে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে স্কুল শুরুর আগে অ্যাসেম্বলি বা সমাবেশ হবে না। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা প্রতিদিন পরিমাপ করতে হবে এবং তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো উপসর্গ আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবক-কর্মচারী ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে বা অন্য কী করতে হবে— এ বিষয়গুলো নিয়ে এরই মধ্যে চারটি পৃথক পৃথক প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে মাউশি। সেগুলো মাউশির ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট ও ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত করা হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর