ইজিপ্ট এয়ারের ২ বিমানে ৬৫০ কোটি টাকা গচ্চা, সিন্ডিকেটকে তলব
৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:২৫ | আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:৫৫
ঢাকা: পাঁচ বছরের চুক্তিতে মিশরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে লিজ নেওয়া দু’টি এয়ারক্রাফটে সাড়ে ৬শ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে বাংলাদেশ বিমানকে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তলব করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এই কমিটির পরবর্তী বৈঠকে তাদের হাজির হতে বলা হয়েছে।
জাতীয় সংসদ ভবনে আজ বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠক থেকে তলব করা হয়েছে ওই কর্মকর্তাদের। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। কমিটির সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, তানভীর ইমাম, আশেক উল্লাহ রফিক, আনোয়ার হোসেন খান, শেখ তন্ময়, সৈয়দা রুবিনা আক্তার এবং কানিজ ফাতেমা আহমেদ বৈঠকে অংশ নেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বলা হয়, ইজিপ্ট এয়ারের ওই উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার পর থেকে ইঞ্জিন বিকল হওয়া, আবার ভাড়ায় আনা, সেগুলোর মেরামত এবং উড়োজাহাজের ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক কাজে সাড়ে ছয়শ কোটি টাকা খরচ করা হয়। এই টাকা দিয়ে একটি নতুন উড়োজাহাজ কেনা সম্ভব। এ ঘটনায় বিমানের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেককে চাকরিচ্যুত এবং সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের বদলি করা হলেও নিজ নেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। এ কারণেই ওই কর্মকর্তাদের তলব করে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে স্থায়ী কমিটি।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ইজিপ্ট এয়ারের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। সেই চুক্তি অনুযায়ী ইজিপ্ট এয়ার থেকে দু’টি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান। প্রথম বোয়িং বিমানের বহরে যুক্ত হয় ওই বছরের মার্চেই। দ্বিতীয়টি বিমানের বহরে যুক্ত একই বছরের মে মাসে। বোয়িং দু’টি বিমানের বহরে যুক্ত হওয়ার ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল করতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন।
ওই সময় সুবিধাভোগীদের স্বার্থ হাসিল করতে চড়া দামে ইঞ্জিন ভাড়া করার অনুমোদন দেয় তৎকালীন বিমানের পরিচালনা পর্ষদ। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয়ে যায় দ্বিতীয় বোয়িংয়ের ইঞ্জিনটিও। সেই উড়োজাহাজ সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে ফের ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। এরপর থেকে নানা অজুহাতে গ্রাউন্ডেড থাকে উড়োজাহাজ দু’টি। নষ্ট হয়ে যায় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও। পরে ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ফলে এয়ারক্রাফট দু’টি ফেরত দেওয়া হয়।
বিমানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দুই উড়োজাহাজ লিজ আনা, মেরামতে চরম অবহেলা ও অনিয়মের কারণেই বিমানকে এতো টাকা গচ্চা দিতে হয়। উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার পর থেকে ইঞ্জিন বিকল হওয়া, আবার ভাড়ায় আনা, সেগুলোর মেরামত এবং উড়োজাহাজের ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক কাজে এ সাড়ে ছয়শ কোটি টাকা খরচ হয়, যা দিয়ে একটি নতুন উড়োজাহাজ কেনা সম্ভব।
এদিকে, ইজিপ্ট এয়ার থেকে লিজে আনা এয়ারক্রাফট দু’টি ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়াতেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (প্রকৌশল) খন্দকার সাজ্জাদুর রহিমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হয়। একই অভিযোগে বরখাস্ত হন প্রধান প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) জি এম ইকবাল।
সংসদ সচিবালয় থেকে আরও জানা গেছে, মিশরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ড্রাই লিজে আনা দুইটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ সংগ্রহের পর চুক্তি অনুযায়ী যাত্রী ঠিকভাবে চলাচল না করলেও এদের পেছনে বাংলাদেশ বিমানকে মাসে ১১ কোটি টাকা করে দিতে হয়েছে। বহন করতে হয়েছে সব ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। পাঁচ বছরের আগে চুক্তি বাতিল করতে পারবে না বিমান— এমন অসম চুক্তি করে এয়ারক্রাফট দু’টি আনা হয়েছিল।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
৬৫০ কোটি টাকা গচ্চা ইজিপ্ট এয়ার উড়োজাহাজ লিজ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স