Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের মুখঢাকা নিকাব পরার নির্দেশ তালেবানের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৫৭ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৬:০৫

আফগানিস্তানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের মুখঢাকা নিকাব পরার নির্দেশ দিয়েছে তালেবান। সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের আবায়া ও মুখের অধিকাংশ ঢেকে রাখে এমন নিকাব পরার নির্দেশ দিয়েছে তারা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের আলাদা শ্রেণিকক্ষ অথবা পর্দা দিয়ে আলাদা করে পাঠদানের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। গত মাসে দেশটির ক্ষমতা দখলের পর নারী স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করার কথা বললেও, ক্রমেই অবস্থান বদল করছে উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) তালেবানের শিক্ষা বিষয়ক কর্তৃপক্ষের জারি করা এক নীতিমালায় নারীশিক্ষা বিষয়ে আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে পোশাক বিধির পাশাপাশি বলা হয়েছে, ছাত্রীদের শুধুমাত্র নারী শিক্ষকরাই পড়াতে পারবেন। নারী শিক্ষক না পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র চরিত্রবান বয়স্ক শিক্ষকরাই মেয়েদের পাঠদান করতে পারবেন।

তবে এই আদেশ শুধুমাত্র বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই নীতিমালায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,  ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের প্রথম শাসনামলে দেশটিতে মেয়েরা ব্যাপকহারে শিক্ষাবঞ্চিত ছিল। মূলত তালেবানের জারি করা নানা নিয়মনীতির কারণেই নারীশিক্ষা থমকে পড়ে। তবে ২০০১ সালে তালেবানের শাসনামল অবসানের পরপর আফগানিস্তানে বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের  সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। পাশাপাশি বেগবান হয় নারীশিক্ষা কার্যক্রম। দুই দশক পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর ফের নারীশিক্ষায় কঠোর নিয়মনীতি জারির পথে হাঁটছে তালেবান।

যদিও তালেবানের জারি করা নতুন নিয়ম অনুযায়ী মেয়েদের চোখ-মুখ ঢাকা বোরখা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কিন্তু নিকাব পরলে মূলত চোখ ছাড়া পুরো মুখমণ্ডলই ঢাকা থাকে—যা প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীদের মুখঢাকা বোরখা পরতেই বাধ্য করবে।

সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে আগেই তালেবানের পক্ষ থেকে নতুন এই নির্দেশনা আসে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পাঠদান করতে হলে নারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। এটি সম্ভব না হলে চরিত্রবান হিসেবে সুনাম আছে এমন বয়স্ক পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

শুধু শ্রেণিকক্ষ আলাদা করলেই হবে না, ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকা ও বাইরে বের হওয়ার আলাদা আলাদা গেটও থাকতে হবে। আবার শ্রেণিকক্ষের বাইরে কথা বলা বা মেলামেশা বন্ধ করতে মেয়েদের ক্লাস ছেলেদের ক্লাসের চেয়ে অন্তত পাঁচ মিনিট আগে শেষ হতে হবে। ক্লাস শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ভবন ছাড়ার আগে মেয়েদের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে হবে। তালেবানের উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক কর্তৃপক্ষের জারি করা ওই নির্দেশনায় এসব কথা বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘বলতে গেলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। মেয়েদের আলাদা করে পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ বা নারী শিক্ষক আমাদের নেই। তবে তারা (তালেবান) যে মেয়েদের স্কুলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে এটাই বিশাল ব্যাপার।’

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলসহ বড় বড় প্রাদেশিক শহরগুলোর রাস্তায় মেয়েদের মুখঢাকা নিকাব পরা অবস্থায় প্রায় দেখাই যেত না। তবে তুলনামূলক ছোট শহর ও গ্রামে নিকাব পরা মেয়েদের দেখা যেত। তবে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পরপর কাবুলসহ গোটা দেশে বোরখা ও মুখঢাকা নিকাবের বেচাকেনা বেড়ে গেছে বলেও খবর প্রকাশ হয়েছে।

গত বিশ বছর ধরে আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি, বিশেষত মেয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেড়েছিল। গত মাসে তালেবানদের কাবুল দখলের আগে নারী-পুরুষরা একসঙ্গে ক্লাস ও  সেমিনারে অংশ নিত। তবে গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। গত মাসে ক্ষমতা দখলের পর দুই দশক আগের কট্টরপন্থা থেকে বেরিয়ে নীতিগত নানা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিল তালেবান। ধারণা করা হচ্ছিল, তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষ পর্যায়ে নারীদের নিয়োগ দেওয়া হবে।

সারাবাংলা/আরএফ/আইই

আফগানিস্তান টপ নিউজ তালেবান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী মুখঢাকা নিকাব