প্রায় ১৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকিতে নাসির গ্লাসের বিরুদ্ধে মামলা
২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:২৩
ঢাকা: বৃহৎ গ্লাস উৎপাদনকারী নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে প্রায় ১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ( ২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান।
তিনি জানান, ভ্যাট গোয়েন্দা জুলাই/২০১৪ হতে জুন/২০১৮ পর্যন্ত তদন্ত করে। প্রতিষ্ঠানটির দাখিলকৃত সি.এ ফার্ম কর্তৃক প্রদত্ত বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি/ অন্যান্য দলিলাদি থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই/পর্যালোচনা করে মামলার প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া তদন্তকালীন প্রতিষ্ঠানের আত্মপক্ষ সমর্থনে বিভিন্ন তথ্যাদি ও বক্তব্য আমলে নেওয়া হয়েছে।
মইনুল খান আরও জানান, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সিএ ফার্ম কর্তৃক প্রণীত অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে ভ্যাট এর হিসাব অনুসারে প্রতিষ্ঠানটি ২ কোটি ৯ লাখ ৯ হাজার ৮৩৩ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির মূসকের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ২৯ লাখ ১২ হাজার ৯৩৮ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত মূসক বাবদ ৩ কোটি ২০ লাখ ৩ হাজার ১০৫ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়। এই ফাঁকির উপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ১ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৮৩৪ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নাসির গ্লাস প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তদন্ত মেয়াদে প্রদেয় ও চলতি হিসাবের পার্থক্য, সোডিয়াম সালফেট অতিরিক্ত ব্যবহারের ওপর রেয়াত কর্তন, প্রাকৃতিক গ্যাস অতিরিক্ত ব্যবহারের উপর রেয়াত কর্তন, বিজ্ঞাপন অতিরিক্ত ব্যবহারের ওপর রেয়াত কর্তন, মিক্সার গ্যাস অতিরিক্ত ব্যবহারের উপর রেয়াত কর্তন, উপকরণ মূল্য ৭.৫% এর অধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় রেয়াত কর্তন, নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে রেয়াত কর্তন, ঘোষণায় করযোগ্য মূল্যভিত্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না থাকায় রেয়াত কর্তন এর কারণে প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম পাওয়া গেছে।
আমদানি পণ্য (স্পেয়ার পার্টস) ক্রয় রেজিস্টারে এন্ট্রি না করে খোলা বাজারে বিক্রি করায় রাজস্ব বাবদ প্রতিষ্ঠানটি কোনো ভ্যাট পরিশোধ করেনি। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত মূসক বাবদ ৮ কোটি ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়। এই ফাঁকির উপর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট আইন অনুসারে মাস ভিত্তিক ২% হারে ১ কোটি ৯১ লাখ ৯৯ হাজার ২২০ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য।
মইনুল খান জানান, তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট অপরিশোধিত মূসক এর পরিমাণ ১১ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ১১৯ টাকা এবং সুদ বাবদ ৩ কোটি ৪৪ লাখ ২ হাজার ৫৪ টাকাসহ ১৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮৪ হাজার ১৭৩ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।
এদিকে ভ্যাট গোয়েন্দা বলছে, তদন্তে উদ্ঘাটিত ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট আদায়ে আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তরে পাঠানো হয়েছে।
সারাবাংলা/এসজে/একে