ভ্যাকসিনের এসএমএসের কথা বলে টাকা আত্মসাৎকারী চক্র গ্রেফতার
২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৪৪ | আপডেট: ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:২৪
ঢাকা: অল্প সময়ে করোনার ভ্যাকসিনের এসএমএস পাইয়ে দেবে এমন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)। র্যাব জানিয়েছে, এসএমএস তাড়াতাড়ি আসবে এ জন্য প্রতারক চক্রটি আড়াই থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। এখন পর্যন্ত চক্রটি অন্তত ২০০ জনের কাছ থেকে এরকম টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল এলাকা থেকে গ্রেফতাররা হলো, মো. নুরুল হক (৪৭), মো. সাইফুল ইসলাম (৩০), মো. ইমরান হোসেন (২৩) ও দুলাল মিয়া (৩৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ম্যাসেজের প্রতারণায় ব্যবহৃত চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র্যাবের কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খোন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
র্যাবের পরিচালক বলেন, এই প্রতারক চক্রটি প্রবাসীদের টার্গেট করত। কারন তাদের বিদেশে যাওয়ার তাড়া থাকে। অনেক সময় তাদের টিকিট কাটা থাকে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তারা যত দ্রুত সম্ভব টিকা নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রতারক চক্রের সদস্যদের মিথ্যে প্রলোভনে সাড়া দেন। অন্যদিকে এসএমএস ছাড়া টিকা দেওয়ার কোনো বিধান নেই। চক্রটি এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষের কাছ থেকে আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রবাসীদের টিকা দেওয়ার জন্য সরকার সাতটি হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়েছে। চক্রটি প্রবাসীদের টার্গেট করেই সেসব হাসপাতালের সামনে ঘোরাফেরা করতে থাকে। টিকা পেতে বিভিন্ন তাড়ার কারণে প্রবাসীরা নির্ধারিত হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। আর তখনই প্রতারক চক্রটি দ্রুত এসএমএস পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়।
টাকা নেওয়ার পর অনেকে স্বাভাবিকভাবেই এসএমএস পেয়ে যেতেন, তখন এই প্রতারকরা নিজেরা ক্রেডিট নিতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তদবির করে দুই-একটি এসএমএস দেওয়ার ব্যবস্থা করতো। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা প্রলোভন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।
যারা এসএমএস পেতেন তারা সাধারণত অভিযোগ করেননি। কিন্তু টাকা দিয়েও এসএমএস না পেয়ে অনেকে অভিযোগ করেছেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে, যাদের কাছ থেকে আড়াই থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করা হয় বলেও জানান তিনি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের মূলহোতা আটক নুরুল হক। আটক সাইফুল ও ইমরান হাসপাতালের সামনে দাড়িয়ে ভিকটিমদের দ্রুত ম্যাসেজ পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাত। এরপর রাজি হলে তাদেরকে নুরুল হকের কাছে নিয়ে যাওয়া হতো, সেখানে নিয়ে টাকা নির্ধারণ করা হয়। টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ভিকটিমদেরকে দুলালের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে কতদিনের মধ্যে এসএমএস পাবে সেই নিশ্চয়তা দিত দুলাল।
নুরুল দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন, ইমরান একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরিরত। সাইফুল রমনা এলাকার চা বিক্রেতা, তিনি একসময় একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুলাল মিয়া একটি হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে কর্মরত। তাদের অবস্থান ও পেশার কারণে বিদেশগামীদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়। তারা মুগদা, শাহবাগ, রমনা, শেরেবাংলা নগর, মিরপুর, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আটক দুইজন সরকারি হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত থাকার সুবাদে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে তাদের পূর্ব পরিরিচয় ছিল। তাদের কাছ থেকে আমরা ২-৩ জনের তথ্য পেয়েছি, যাদের মাধ্যমে হয়ত ১০-১৫ টি মেসেজ তারা পাঠাতে পেরেছে। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।
এ ছাড়া মামলার তদন্তে জড়িত অন্যদের তথ্য বেরিয়ে আসবে, সে অনুযায়ী পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সারাবংলা/ইউজে/একে