Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুখ্যাত ফকা চৌধুরীর নামে সড়ক কেন, প্রশ্ন নওফেলের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ আগস্ট ২০২১ ২০:৫৪ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২১ ০১:০৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও কুখ্যাত স্বাধীনতা বিরোধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে চট্টগ্রাম শহরে সড়ক থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার-আলবদরের প্রধানের নামে সড়কের নামকরণ লজ্জার বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

শনিবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপমন্ত্রী নওফেল এসব কথা বলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্য এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে সংগঠনের কার্যালয়ে এই সভার আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এদেশে কেউ কখনো বিশ্বাস করতে পারেনি যে—আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি হবে। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী কত কথা বলেছে, কত হাঁকডাক দিয়েছে—তার কিছু হলে দেশে আগুন জ্বলবে। সেই সালাহউদ্দিন কাদেরেরও মাফ হয়নি, তাকেও ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে, কেউ প্রতিবাদ করেনি, টুঁ শব্দও করেনি। মতিউর রহমান নিজামীরও ফাঁসি হয়েছে, কেউ প্রতিবাদ করেনি। কারণ বাংলার মাটি এদের অভিশাপ দিয়েছে। কেউ কাঁদেনি তাদের জন্য। তাদের পরিবারের সদস্যরাও কাঁদেনি। একজন নৃশংস খুনির জন্য তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও কোনো আবেগ ছিল না।’

বিজ্ঞাপন

‘এই যুদ্ধাপরাধীদের জন্য দেশের মানুষের কোনো আবেগ ছিল না। তাদের কিছুই ছিল না। ছিল শুধু মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা। এই বাংলাদেশকে লুট করে তারা সেই টাকা বানিয়েছে। তাদের সন্তানরা সেই টাকা ভোগ করছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে, কিন্তু তাদের ঘরবাড়ি-সম্পদ এখনও বহাল তবিয়তে আছে। তারা এখনও রাজার হালে এদেশে বসবাস করছে। এটা দুঃখের, কষ্টের। এর চেয়েও লজ্জাজনক হচ্ছে— একাত্তরের কুখ্যাত রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রধান ফজলুল কাদের চৌধুরী, তার নামেও চট্টগ্রাম শহরে সড়ক আছে।’

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ফকা চৌধুরীর নামে সড়কের নাম পরিবর্তনের দাবি তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেন একজন যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে চট্টগ্রাম শহরে সড়ক থাকবে ? তাহলে স্বাধীনতার ৫০ বছর ধরে আমরা কি করলাম ? সড়কের নাম পরিবর্তনের দাবি আপনাদের তুলতে হবে। এই লজ্জা নিয়ে আমরা আর চলতে চাই না। চট্টগ্রাম শহরে খুনি জিয়াউর রহমানের নামে যেমন জাদুঘর থাকতে পারে না, তেমনি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামেও কোনো সড়ক থাকতে পারে না।’

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে বাঙালি নিধনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন মুসলিম লীগের শীর্ষ নেতা চট্টগ্রামের রাউজানের ফজলুল কাদের চৌধুরী। তার ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। ফকা চৌধুরী হিসেবে পরিচিত এই যুদ্ধাপরাধী দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭১ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রায় দেড় মন সোনা নিয়ে নৌযানে করে পালানোর সময় আনোয়ারা উপজেলার গহীরা উপকূলে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েন। কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই তার মৃত্যু হয়।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের রাজনীতিতে সামনে আসার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যে আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছেন, সেই আদর্শ ধরে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেন। পরবর্তী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ শেখাতে হবে। শুধু স্লোগান দিয়ে সাংগঠনিক শক্তি ধরে রাখা যাবে না। নতুন প্রজন্মকে আদর্শের পাঠ দিতে হবে।’

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সরওয়ার আলম চৌধুরী মণির সভাপতিত্বে এবং নগর কমিটির সদস্য সচিব কাজী রাজিশ ইমরানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোজাফফর আহমেদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী রাসেল, সাহেদ মুরাদ সাকু, মিজানুর রহমান সজীব, সাজ্জাদ হোসেন এবং কামরুল হুদা পাভেল।

এর আগে দুপুরে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা ও উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সাংসদ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

বক্তব্যে উপমন্ত্রী নওফেল সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত উল্লেখ করে বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত। খুনিরা গিয়ে বলল- আমাদেরকে তিনি (জিয়া) বলেছেন তাই আগাইছি। তিনি বলেছেন- তোমরা জুনিয়র অফিসার, তোমরা আগাই যাও। খুনিদের সহায়তা করল। এই জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর-বিমানবাহিনীর হাজার হাজার অফিসারকে হত্যা করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের নিজের হাতে সাইন করে করে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তার পাপের ফল আজ তার ভবিষ্যত প্রজন্ম ভোগ করছে। এক ছেলে তারেক রহমান আরেক খুনি, বিদেশে পালিয়ে আছে। আমেরিকায় সে নিষিদ্ধ। বৃটিশ পাসপোর্ট নিয়ে লন্ডনে বসে আছে। সারা পৃথিবীতে তারেক রহমান একটা ঘৃণিত নাম। জিয়ার আরেক ছেলে কোকো ছিল মাদকাসক্ত।’

চট্টগ্রামের ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের’ নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সাইনবোর্ড একটা লাগিয়ে পুরাতন সার্কিট হাউজটা দখল করে রেখেছে। সেটা আমাদের জন্য লজ্জার। সেখানে কিছুই নেই। একটা রুমে সেদিন তিনি মারা গেলেন। তাই বলে একটা পুরো প্রত্মতাত্ত্বিক সম্পদ, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জড়িত, যেখানে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি আছে, সেটাকে অবরুদ্ধ গোডাউন বানিয়ে ফেলতে হবে ! সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, এই জায়গাটা পরিষ্কার করে দিন। এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর স্থাপন আমাদের দাবি।’

‘জিয়াউর রহমানের মৃতদেহ কোথায় আছে, সেটা কেউ জানে না। এখন বিএনপিও সেই জাদুঘরে যায় না। তাহলে কেন সেটা দখলে থাকবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আমরা চিঠি লিখেছি। উনাদের বলব, এই অভিশাপ থেকে আমাদের মুক্তি দিন। আমরা মুক্তি চাই। মাননীয় মেয়র মহোদয়কে বলব, সামনে শিশু পার্কের নামে জমিটা দখল করে বসে আছে। সেটা থেকেও মুক্তি দিন।’

ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এবং নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান।

সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ

টপ নিউজ নওফেল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর