Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেত্রকোনায় ৬ মাসে ৯৪ জনের আত্মহত্যা, প্রশাসনের উদ্বেগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৬ আগস্ট ২০২১ ১৬:০৪ | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২১ ১৭:৫৬

নেত্রকোনা: জেলায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেড়েছে আত্মহত্যার ঘটনা। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ গলায় ফাঁস দিয়ে বা বিষপান করে আত্মহত্যা করছেন। এদের মধ্যে স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধও রয়েছেন। জেলায় গত ৬ মাসে (জানুয়ারী-জুন) ৯৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। এতে করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় প্রশাসনসহ সচেতন মহল।

এ সব আত্মহত্যায় নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। তাদের ৬১ জনই পুরুষ এবং ৩৩ জন নারী। এছাড়াও গত সাত দিনের ব্যবধানে তিন থেকে চারজনের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার সকালে দুর্গাপুর উপজেলায় ঘরের আড়ায় এক বালু শ্রমিক আইনাল (২২) গলায় গামছা লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত সোমবার (২৩ আগস্ট) বিকালে নেত্রকোনা শহরের কুড়পাড় ভুঁইয়া বাড়ির নিবাসী তোফায়েল নামে দত্ত স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী গামছা দিয়ে নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে জেলার পুর্বধলা উপজেলার আবুল হাসেম খান (৭০) নামে এক বৃদ্ধ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। ওই বৃদ্ধ উপজেলার বিশকাকুনী ইউনিয়নের ধোবারুহী গ্রামে নিজ বাড়িতে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলে মৃত্যুবরণ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কিশোর তোফায়েল মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিল। অন্যদিকে পুর্বধরার বৃদ্ধ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। শুক্রবার (২০ আগস্ট) মোহনগঞ্জ উপজেলার পাবই গ্রামে বাড়ির পাশে আম গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় আলতু সিদ্দিক (৭৬) নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে নেত্রকোনা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেনাজ তাবাসসুম উষা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় স্কুল শিক্ষক ও বাবা-মা তা দেখার পর উষাকে নামিয়ে ফেললেন। পরে আটদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাকালে মারা যায় সে।

বিজ্ঞাপন

নেত্রকোনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছরের জানুয়ারি জুন পর্যন্ত ৯৪ জনের মধ্যে ৬১ জন পুরুষ ও ৩৩ জন নারী রয়েছে। এদের মধ্যে ফাঁসিতে ঝুলে ৭৩ জন এবং বিষপানে ২০ জন ও গায়ে আগুন ধরিয়ে ১ জন মারা যায়। বয়স অনুসারে ১৮ বছরের নীচেই রয়েছে ৩৩ জন, এর মধ্যে ২১ জন পুরুষ ও ১২ জন নারী। ১৯ থেকে ৩০ বছরের বয়সী ৩৭ জনের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী। ৩১ থেকে ৪৫ বছরের বয়সী ১৫ জনের মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। ৪৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৭ জনের মধ্যে ৪ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। ৬০ বছরের উপরে দুজনই পুরুষ।

জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং তারুণ্য সংগঠক হিমু পাঠক আড্ডার প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক আলপনা বেগম বলেন, ৯৪ জনের মধ্যে ৩৩ জনই ১৮ বছরের নীচে। অর্থাৎ শিশু এবং কিশোর। এই বয়সটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একে তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তার মধ্যে সুস্থ কোনো বিনোদন নেই। ফলে শিশুরা হয় মোবাইলে আসক্ত হচ্ছে, নয়তো মাদকে।

তিনি আরও বলেন, বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে এমনিতেই শিশুদের শারিরীক পরিবর্তনের সঙ্গে মানসিক পরিবর্তন ঘটে। তখন নানা কারণে শিশুরা হতাশাগ্রস্থ হয়। অনেক পরিবারে বড়রা শিশুদের কথা শুনতে চায় না, গ্রামেই এই সমস্যা বেশি। বেশির ভাগ বাবা-মা’ই সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করে না। তখন তারা মনের কথা বলতে বন্ধু-বান্ধব খুঁজে। অথবা মোবাইলে আসক্ত হয়। এছাড়াও মাদকের কবলে চলে যায় অনেক শিশু। সেজন্য বাবা-মা বা পরিবারের সকলের প্রয়োজন শিশুদেরকে সময় দেওয়া। পাশাপশি তাদের সমস্যাগুলো শুনে সে অনুযায়ী পরামর্শ দেওয়া।

আলপনা বেগম বলেন, সার্বিকভাবে বলা যায় বই থেকে দূরের শিশুরাই বেশিরভাগ এই পথ বেছে নিচ্ছে। পরে বাবা-মাদের মধ্যে অনেকেই একমাত্র সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায়। এই জন্য পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি গল্প ও উপন্যাস পড়তে শিশুদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। একইসঙ্গে সুস্থ বিনোদন এবং সাংস্কৃতিক চর্চাও অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শিশুদের মনোজগতে সুস্থ ধারার বিনোদন অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে। এর আরেকটি উপাদান খেলাধুলা। কিন্তু দুঃখের বিষয় শিশুরা আজকাল খেলাধুলা করতেই সুযোগ পায় না। তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। পাড়ায়-মহল্লায় খেলার মাঠ এবং সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী। তিনি বলেন, বিষয়়টি উদ্বেগের। আমরা প্রতিটি মৃত্যুর তদন্তে দেখলাম যে, বৃদ্ধের সংখ্যাও কম নয়। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একা থাকেন। এছাড়াও শিশু-কিশোরদের বিষয়গুলো অভিভাকরা পরিষ্কার করেন না। ফলে আত্মহত্যার সঠিক কারণ বের করা যাচ্ছে না।

কিন্তু অনুসন্ধানে প্রেম ও মাদক সংক্রান্ত বিষয়গুলো উঠে আসে। আবার অনেকে পরিবারের সঙ্গে রাগ করে এই পথ বেছে নেয়। তবে এক্ষেত্রে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন জেলার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী।

সারাবাংলা/এনএস

আত্মহত্যা টপ নিউজ নেত্রকোনা

বিজ্ঞাপন

লস অ্যাঞ্জেলসে দাবানল, নিহত ৫
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর