জাপানি নারীর দুই শিশুকে হাইকোর্টে হাজিরের আবেদন
২৩ আগস্ট ২০২১ ১৩:৪৩ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২১ ১৩:৫৪
ঢাকা: পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) হেফাজতে থাকা জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকোর দুই শিশুকে হাইকোর্টে হাজির করতে আবেদন করার অনুমতি নিয়েছেন আইনজীবী।
সোমবার (২৩ আগস্ট) সিআইডির হেফাজতে থাকা দুই শিশুকে হাজির করার জন্য বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদন জানানো হয়।
এরপর, আদালত আবেদনের অনুমতি দিয়ে দুপুর ২টায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন।
আদালতে শিশুদের বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। শিশুদের মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
দুই জাপানি শিশুকে উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম আদালতে বলেন, ‘গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় শিশুদের বাসা থেকে জোরপূর্বক টেনে হিঁচড়ে থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাদের মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে রাত সাড়ে ৩টার পর তাদের তেজগাঁওয়ে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুনেছি ওই দুই শিশুকে আজ নিম্ন আদালতে তাদের হাজির করা হবে। এদিকে আপনাদের আদেশ আছে হাইকোর্টে হাজির করার। তাহলে নিম্ন আদালতে কেন নেওয়া হবে? আমরা তো আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করিনি। এ বিষয়ে আমরা একটি আবেদন করতে চাই। অনুমতি দিলে দুপুর ২টায় উপস্থাপন করবো।’
তখন শিশুদের জাপানি মায়ের পক্ষের আইনজীবী শিশির মনিরকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, ‘বাচ্চাদের এভাবে নিয়ে গেল, এটা কোনো সমাধান হলো না।’
শিশির মনির আদালতকে বলেন, ‘গতকাল রাতে সিআইডি থেকে আমাকে ফোন করে শিশুদের মাকে নিয়ে যেতে বলে। আমি সেখানে যাই। যাওয়ার পর শিশুদের সঙ্গে ৪০ মিনিট কথা বলার সুযোগ পান মা। ওই সময় আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলি হাইকোর্টের আদেশ আছে। আপনারা যা ইচ্ছে তা করতে পারেন না।’
তখন বাবার পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম বলেন, ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে বাচ্চাদের সঙ্গে অবস্থান করছেন তাদের বাবা। তাদের মা ৩টা পর্যন্ত অবস্থান করে চলে যায়।’
এ সময় শিশির মনির বলেন, ‘এটি স্পর্শকাতর বিষয়। বাচ্চাদের যেন সবার সামনে উপস্থিত না করা হয়।’
ফাওজিয়া করিম তখন আদালতকে বলেন, ‘আপনারা বাচ্চাদের কথা শোনেন। আপনারা যে আদেশ দেবেন তা আমরা মেনে নেব।’ তবে সাপোর্ট সেন্টারে শিশুদের নিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আবারও বলেন, ‘নিম্ন আদালতের পরিবর্তে শিশুদের হাইকোর্টে নিয়ে আসুক।’
পরে আদালত সম্পূরক আবেদনের সুযোগ দিয়ে শুনানির জন্য দুপুর ২টায় সময় নির্ধারণ করেন।
এর আগে, গতকাল ১০ ও ১১ বছর বয়সী মেয়ে দু’টিকে উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত ১৯ আগস্ট দুই জাপানি শিশু এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন। সঙ্গে তাদের বাবা ও ফুফুকে নিয়ে আসতে বলা হয়। রাজধানীর গুলশান ও আদাবর থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
১৯ আগস্ট সকালে দুই কন্যা সন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো (৪৬)। রিটে দুই সন্তানকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চেয়েছেন ওই নারী।
আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হচ্ছে- জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) ও সানিয়া হেনা (৭)। এরা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি আরও জানান, ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
শিশির মনির জানান, গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এরপর হাইকোর্টে রিট করেন ওই জাপানি চিকিৎসক।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও