বরিশালে সংঘর্ষের জেরে জনদুর্ভোগ
২১ আগস্ট ২০২১ ২১:৫৭ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২১ ২২:৫৩
বরিশাল: তিন দিন ধরে বরিশাল নগরীতে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ বন্ধ রাখার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মেয়রের আহ্বানে শনিবার (২১ আগস্ট) রাত ৮টা থেকে কাজে ফিরেছেন। মধ্যবর্তী সময়ে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়।
এর আগে, সন্ধ্যা ৭টায় নগরের কালিবাড়ি রোডের বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলেনে তিনি প্রশাসনের প্রতি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি না করারও অনুরোধ জানান।
বিভিন্ন রাস্তার পাশে বর্জ্যের স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনকি বসতবাড়ি থেকেও বুধবারের (১৮ আগস্ট) পর থেকে আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা-আবর্জনা নেননি।
বরিশাল নগরের প্রতিদিনকার বর্জ্য সাধারণত রাতের মধ্যেই ট্রাকে করে কাউনিয়া এলাকার পুরানপাড়া ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই কাজ করেন। কিন্তু বুধবার রাত থেকে নগরীর প্রতিটি রাস্তায় স্তূপাকারে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
তবে, কেন বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, সে ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন এবং প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা রবিউল ইসলামকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
শনিবার (২১ আগস্ট) সকালে নগরীর কাঠপট্টি, বটতলা, নবগ্রাম রোড, বিএম কলেজের সামনের এলাকা, সিঅ্যান্ডবি রোডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাস্তার পাশে বর্জ্যের স্তূপ দেখা যায়।
যার মধ্যে সিঅ্যান্ডবি রোডটি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের অংশ। এই মহাসড়কের দুই পাশে এমনকি সড়কের মাঝখানে আবর্জনার স্তূপ থাকায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। কাশিপুর থেকে আমতলা মোড় পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে বর্জ্যের স্তূপ দেখা যায়। বৃষ্টির পানিতে এসব বর্জ্যমিশ্রিত পানি ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তাঘাটে।
নগরের নথুল্লাবাদ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা সারাবাংলাকে জানান, তিনদিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে। আগে রাতের মধ্যেই সব পরিষ্কার করে নিতেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ইউএনওর সঙ্গে ঝামেলার পর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বর্জ্য অপসারণ করছেন না। ফলে পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে।
অটোরিক্সাচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের কাশিপুর থেকে আমতলার মোড় পর্যন্ত সড়কের পাশে-মধ্যে বর্জ্যের স্তূপ। ইউএনও কার্যালয়ের সামনেও বর্জ্য ফেলে রাখা হয়েছে। এতে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।
বিএম কলেজের সামনে প্রফেসর গলির মুখে দুদিন ধরে বর্জ্যের স্তূপ। বৃষ্টির পানি ধুয়ে দূষিত পানি ছড়াচ্ছে। মানুষের পায়ে পায়ে ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাসায় এসে ময়লা নিয়ে যেত, তিনদিন ধরে তা বন্ধ। এরপর বাধ্য হয়ে রাস্তায় ময়লা ফেলে এসেছেন অনেকে।
হাতেম আলি চৌমাথা এলাকার এক গৃহিণী বলেন, ভাড়া বাড়ির পাঁচতলায় থাকি। সিটি করপোরেশনের লোকজন বাসায় এসে ময়লা নিয়ে যায়। এ জন্য তারা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আলাদাভাবে মাসিক পারিশ্রমিকও দেন। কিন্তু হঠাৎ ময়লা না নেওয়ায় তারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাস্তায় নামলেও দুর্গন্ধে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকা এবং সদর উপজেলা পরিষদ এলাকায় ব্যানার অপসারণ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মূলত ওই সংঘর্ষের পর থেকেই নগরে বর্জ্য অপসারণ বন্ধ আছে।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার কারণে করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
সারাবাংলা/একেএম