Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভিকারুননিসার তদন্ত প্রতিবেদনে দেরি কেন?

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৮ আগস্ট ২০২১ ১০:৩২

ঢাকা: ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ ও অভিভাবক ফোরামের নেতাদের বিবাদের কারণ জানতে যে তদন্ত কমিটি করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তার প্রতিবেদন এখনো জমা পড়েনি। তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ২০ দিন। তবে কমিটি বলছে, তাদের তদন্ত কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে!

শিক্ষা মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের যে তদন্ত কমিটি গঠন করছে, সেটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) খালেদা আক্তার। তার সঙ্গে আছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইনও। দু’জনেই বলছেন, তাদের তদন্ত প্রতিবেদনের কাজ শেষ প্রায়। এ সপ্তাহেই প্রতিদেনটি জমা দেওয়া সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফোনালাপটির ফরেনসিক রিপোর্টের জন্যই প্রতিবেদন তৈরিতে দেরি হয়েছে। এর মধ্যে আরও কয়েকটি ফোনালাপ তাদের হাতে পৌঁছেছে। এসব ফোনালাপে অধ্যক্ষ ও অভিভাবক ফোরামের নেতাদের কেউ সংশ্লিষ্ট ছিল কি না, নাকি অন্য কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে সেটিই নিশ্চিত হতে চাইছে তদন্ত কমিটি।

ভিকারুননিসার এই ঘটনায় নির্দোষ কাউকে যেন অকারণে অভিযুক্ত করা না হয়, সে বিষয়েও তদন্ত কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ এই ঘটনায় অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয় হবে।

আরও পড়ুন: সেই ১৯ জমজকে ভিকারুননিসায় ভর্তি করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

‘ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের ফোনালাপের ভাষা সত্যি হয়ে থাকলে নিন্দনীয়’

তবে ভিকারুননিসার দুর্নীতি নিয়ে এর আগে যে তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর, সেখানে বিভিন্ন অধ্যক্ষের সময়ে হওয়া ভয়ানক সব দুর্নীতির চিত্র উঠে এসছে। এ বছরের ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত করে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়, যেটি জুলাই মাসের শেষে জমা দেওয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরে এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে।

বিজ্ঞাপন

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ভিকারুননিসার সব আয়-ব্যয়ের হিসাব যাচাই করে দেখেছে। যেখানে প্রতিষ্ঠানটির খরচের ৫ কোটি টাকার লেনদেন নিয়ে তারা ‘প্রশ্ন’ রেখেছে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আয়কর পরিশোধ না করার অভিযোগও রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এই অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ বেশ বড়ই বলা চলে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে ভিকারুননিসার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, অধ্যক্ষ ও শিক্ষক-কর্মচারীরা ২ কোটি ১৮ লাখ টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কলেজটিতে ফেরদৌসী বেগম, কেকা রায় চৌধুরী, নাজনীন ফেরদৌস, হাসিনা বেগম, সুফিয়া বেগম ও ফৌজিয়া রেজওয়ান অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের নাম অবশ্য এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

আরও পড়ুন: ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রিট

ঝুলে আছে ভিকারুননিসার তদন্ত প্রতিবেদন

পথ হারিয়েছে ভিকারুননিসা

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিকারুননিসার বসুন্ধরা শাখার সিভিল, স্যানিটারি, বৈদ্যুতিক কাজের ১ কোটি ৫৯ লাখ ১১ হাজার ৬৩৯ টাকার কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনএইচ-কেটিএ (জেভি)। এ কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান করার কথা থাকলে তা করা হয়নি। এ কাজের বিল পরিশোধে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্যাডে কোনো বিল পাওয়া যায়নি।

আসবাব প্রতিষ্ঠান জুটো ফাইবার গ্লাসকে (তারাবো, নারায়ণগঞ্জ) ১৯০ জোড়া ফাইবার গ্লাস (হাই-লো বেঞ্চ) সরবরাহের জন্য বলা হয়। যেখানে ১৩০ জোড়া হাই-লো বেঞ্চ সরবরাহের পর ১৯০ জোড়ার বেঞ্চের বিল সররবাহ করা হয়। এতে মোট ৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা বেশি দেওযা হয়েছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটিকে। একই প্রতিষ্ঠানকে বেইলি রোড শাখায় লো বেঞ্চ এবং হাই বেঞ্চ কিনতে ১২ লাখ ৫৮ হাজার এবং বসুন্ধরা কলেজ শাখার জন্য ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যে পণ্য আদৌ কেনা হয়েছে কি না, সেটি নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত দল।

এছাড়াও ঠিকাদারকে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ, প্রাচীর নির্মাণে দুর্নীতি, বিল ছাড়াই টাকা পরিশোধ, পুরস্কারে অনিয়মসহ ভ্যাট দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।

আরও পড়ুন: ভিকারুননিসা অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবি

বালিশের নিচে পিস্তল রেখে ঘুমান ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ!

তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছর পর্যন্ত অভিভাবকদের কাছ থেকে ভ্যাট বাবদ মোট ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৬২ টাকা আদায় করে। ৩৯ লাখ ২২ হাজার ৫৪৭ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তি থেকে ভাড়া দিয়ে আয় করা ৪৫ লাখ ২৮ হাজার ৩০০ টাকার ভ্যাটও সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এই প্রতিবেদনটির কথা আমি শুনেছি। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সরকারের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়ম-নীতির বাইরে যাওয়া বন্ধ করা হচ্ছে, দুর্নীতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। এ কারণে অনেকেই আমার প্রতি ক্ষুব্ধ। আশা করছি দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে।

সারাবাংলা/টিএস/টিআর

তদন্ত প্রতিবেদন ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ

বিজ্ঞাপন

৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর