‘লক্ষ্য একটাই— জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করা’
১৭ আগস্ট ২০২১ ২২:১৫ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২১ ২২:২৩
ঢাকা: দেশের মানুষের জন্য রক্ত দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের রক্তের ঋণে আবদ্ধ করে গিয়েছেন মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য— তার এই রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি নিবেদিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) এ দেশের মানুষের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন। রক্তের ঋণে আমাদের আবদ্ধ করে গেছেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য— তার এই রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। জাতির পিতা বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সোনার বাংলা গড়ে আমরা সেই ঋণ শোধ করব। সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে, সেই আদর্শ নিয়েই আমাদের পথচলা।
‘বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। জাতির পিতার এই আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যেতে পারে না। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। যে দেশের স্বপ্ন আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন ইনশাল্লাহ হবে,’— বলেন শেখ হাসিনা।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে স্বজন হারানোর বেদনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দিনটি আমাদের জন্য শোকের দিন, কষ্টের দিন। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা— এই দিনটি বাঙালি জাতির জন্য সব হারানোর দিন, শোকের দিন।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি সব হারিয়েছি। আমি জানি হারানোর বেদনা খুব কষ্টের। সেই কষ্ট সহ্য করে একটি লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। সব হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই লক্ষ্য।’
টানা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন, আজ সেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি মর্যাদা পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার আমরা হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৫ শতাংশ, তা আমরা ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে।’
দেশের মানুষের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আরও জানান, জাতির পিতা ভূমিহীনদের জন্য খাস জমি বিতরণ করে ঘর তৈরির কর্মসূচি নিয়েছিলেন। জাতির পিতার সেই লক্ষ্য পূরণে বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারও ভূমি ও ঘরহীন মানুষের জন্য ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় সরকার পৌঁছে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
বক্তৃতায় শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এত স্বল্প সময়ের মধ্যেও একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার পাশপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করে যাওয়া— তিনি সেটি খুব সফলভাবে করে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, সেটি বাস্তবায়ন করে যেতে পারলে বাংলার মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারত। ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে উন্নত জীবন পেতে পারত।
‘কিন্তু ঘাতকের দল সেটা হতে দেয়নি। যারা স্বাধীনতা চায়নি, যারা বাঙালির বিজয় চায়নি, তারাই নির্মমভাবে তাকে হত্যা করে। কিছু লোক তো বেইমানিও করে, মুনাফেকি করে। এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের,’— বলেন শেখ হাসিনা।
আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তারানা হালিম।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর