১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কোনো সেনা বিদ্রোহ নয়: নানক
১৫ আগস্ট ২০২১ ২২:১৪
ঢাকা: ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কোনো সেনা বিদ্রোহ নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আর পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদদে এ দেশীয় কিছু খুনিদের ভাড়া করে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের উপর বর্বর হামলা চালানো হয়।
রোববার (১৫ আগস্ট) বিকেলে কৃষিবিদ কনভেনশন হলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শোকসভা ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ ও কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ’র যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়।
১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ডাক না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো সেদিন একটি মিছিল হরো না, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হলো না। কেন হলো না? কাদের ব্যর্থতার কারণে সেদিন প্রতিরোধ হলো না? কাদের দায়িত্ব ছিল সেদিন এই প্রতিবাদে-প্রতিরোধের ডাক দেওয়ার?’
পাকিস্তানি আইএসআই’র গোয়েন্দা জিয়াউর রহমান আর খুনি মোশতাকরা সেদিন ষড়যন্ত্র করেছিল বলে অভিযোগ করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের অবদানের কথা স্মরণ করেন আওয়ামী লীগ নেতা নানক। তিনি বলেন, ‘খুনি মোশতাক-জিয়ারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্র করেছিল। কেন কনফেডারেশন তৈরি করা? আর তাই যদি সত্য হয় তাহলে একাত্তরে দেশ স্বাধীনতার পরে মোশতাক-জিয়াকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কেন তাদের বিচার করা হলো না?’
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বিভিন্ন নামে ব্যাঙের ছাতার মতো বামপন্থী সশস্ত্র দল তৈরি করা হয়েছিল জানিয়ে নানক বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল, তারাই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। আর সে কারণেই স্বাধীনতার পরে মুজিবের বাংলাদেশে পাটের গুদাম পুড়িয়ে দিয়েছে। সারাদেশে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে। কুষ্টিয়ায় ঈদের জামাতে এমপিকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকে হত্যা করেছে। একদিকে সশস্ত্র সংগঠন গড়ে উঠেছে, আরেকদিকে মুক্তিযুদ্ধের শক্তির ভেতরে বিভাজন তৈরি করেছিল ওই সিরাজুল আলম খান দাদা ভাইরা।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, ‘তারা এই মুক্তিযুদ্ধের শক্তির বিরুদ্ধে বিভাজন তৈরি করে জাসদ সৃষ্টি করেছে। সশস্ত্র গণবাহিনী সৃষ্টি করে সারাদেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। একদিকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল, আরেকদিক বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। তখনই বোঝা গিয়েছে একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে দেশে।’
১৫ আগস্টের ঘটনা কোনো সেনা বিদ্রোহ নয় দাবি করে নানক বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয় যে, মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে বসে একজন ডালিম, একজন শাহরিয়ার, একজন নূর, একজন মাজেদ, একজন পাশা বসে মদ খাচ্ছিল, আর হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিল চল যাই ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে পরিবারসহ হত্যা করি। বঙ্গভবনকে দখল করে নিই।’
তিনি বলেন, ‘সেদিন তাদের রাত দশটা থেকে প্রস্তুতি হয়েছে। কামান মুভ করেছে, ট্যাংক মুভ করেছে। ওরা এয়ারপোর্টে একটা সভা করেছে, প্যারেড করেছে। মেজর ডালিমরা বক্তৃতা করেছে। তাহলে কোথায় ছিলেন সেনাপ্রধান? কোথায় ছিলেন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াউর রহমান? কোথায় ছিলেন বিমানবাহিনী প্রধান? কোথায় ছিলেন সামরিক গোয়েন্দা প্রধান? কোথায় ছিলেন এনএসআই প্রধান? কোথায় ছিলেন আইজি সাহেবরা?’
নানক বলেন, ‘এটি সেনা বিদ্রোহ ছিল না। আর সেনা বিদ্রোহ ছিল না বলেই এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডে কে কে অংশ নিয়েছে? তারা কোথায় ছিল? ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পরে কে তাদের নিরাপদে বিশেষ বিমানযোগে ব্যাংককে পৌঁছে দিয়েছে? সে হলো জেনারেল জিয়াউর রহমান। জিয়া শুধু তাদের ব্যাংককে পৌঁছে দেয়নি, পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে নিয়োগ দিয়েছিল। কাজেই জেনারেল জিয়া যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এটি দিবালোকের মতো সত্য।’
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার হয়েছে। যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদেরও বিচার করতে হবে। সেদিন খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে যারা হাত মিলিয়েছিল, তারাও হত্যার সহযোগী। ১/১১ এর সময়ও একটি অপশক্তি সক্রিয় ছিল। আমরা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, হত্যার রাজনীতির অবসান চাই। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার পাশে সবসময় থাকতে হবে। যাতে মোশতাকের মতো কেউ অপচেষ্টায় লিপ্ত হতে না পারে। বাংলাদেশে আর কোনো ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেআইবি’র সভাপতি ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহীদুর রশীদ ভুঁইয়া। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাইদুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন প্রমুখ।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম