মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিবকে শ্রদ্ধায় স্মরণ চট্টগ্রামে
১৫ আগস্ট ২০২১ ১৫:৫০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঘাতকের বুলেট প্রাণ কেড়ে নিলেও জাতির শ্রদ্ধার আসনে যিনি চির অমলিন, মৃত্যুঞ্জয়ী মহামানব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে চট্টগ্রামবাসী। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গত বছরের মতো এবারও বড় ধরনের সভা-সমাবেশের আয়োজন নেই। তবে প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদতবার্ষিকী।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার (১৫ আগস্ট) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান কার্যালয়সহ সকল আঞ্চলিক কার্যালয়, ওয়ার্ড কার্যালয়, স্কুল-কলেজ হাসপাতালে জাতীয় পতাকাসহ সিটি করপোরেশনের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। নগরীর টাইগারপাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চসিক’র মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় মেয়রের সঙ্গে ছিলেন। এরপর দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা হয়েছে।
এদিকে সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি অফিসের ঊধ্র্বতনরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এতে প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন। কালো ব্যাজ ধারণের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন সকল দফতর, বন্দর ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জলযানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান ঊধ্র্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বন্দর কর্মচারী পরিষদ (সিবিএ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় চেয়ারম্যান বলেন, ‘খুনিরা মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেই তার নীতি-আর্দশ ও চেতনা মুছে ফেলতে পারবে। কিন্তু নরপিশাচগুলো বুঝতে পারেনি বঙ্গবন্ধু আছেন প্রত্যেক বাঙ্গালির হৃদয়ে এবং বেঁচে থাকবেন চিরকাল। স্বাধীনতা পরর্বতী যুদ্ধবিধ্বস্ত চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্নস্থানে পুঁতে রাখা মাইন দ্রুত অপসারণ করার জন্য বঙ্গবন্ধু সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরকে দ্রুত পরিপূর্ণভাবে সচল করার ব্যবস্থা করেছিলেন।’
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নিয়ে নিজ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান। এসময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির ইকবালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ সালাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীনতা। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ অবিচ্ছেদ্য। স্বাধীনতার পাশাপাশি যে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের ডাক বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের গৌরবগাঁথা রচনা হচ্ছে বর্তমানে।’
এ সময় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, সদস্য জাফর আহমেদ, আ ম ম দিলসাদ, শওকত আলম শওকত, মোহাম্মদ ইউনুছ, মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন, আকতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ, রেহেনা আকতার, রেহেনা বেগম ফেরদৌসী চৌধুরী, উম্মে হাবিবা বক্তব্য রাখেন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড প্রাঙ্গনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলির সভাপতিত্বে ও উপসচিব মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী, সচিব আবদুল আলীম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ, কলেজ পরিদর্শক মো. জাহেদুল হক, উপ-পরিচালক (হিসাব) তাওয়ারিক আলম, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ নাথ, সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অমল কান্তি বড়ুয়া, সেকশন অফিসার গাজী আবদুল কাইয়ুম।
প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘ইতিহাস বিকৃত করে, ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে বাঙালির হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যায়নি, যাবে না। কারণ বঙ্গবন্ধু, বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম, স্বাধীন বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। বাঙালির হাজার বছরের মুক্তি সংগ্রামের পূর্ণতা এসেছে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে। তাই বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব বাঙালির হৃদয়ে।’
এদিকে নগরীর হালিশহরের বড়পোল এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শোক দিবসের দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ দলটির নেতারা এ সময় ছিলেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও এতিমখানায় খাবার বিতরণ, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে নগর আওয়ামী লীগ।
চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমণ্ডিত সিআরবি’তে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সংগঠকরা সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। হাসপাতালের প্রস্তাবিত স্থানে টানানো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর সময় সংগঠনের সদস্য সচিব ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, যুগ্ম সদস্য সচিব রাশেদ হাসান, সাংবাদিক শুকলাল দাশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুচ উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রামের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) জাতীয় শোক দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল-সকাল ৮টায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা, কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ম্যুরালে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ এবং অনলাইনে আলোচনা সভা। সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ, শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি, কর্মচারি ইউনিয়ন, অনুষদ, আবাসিক হল, প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এদিকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে শোক দিবস উপলক্ষে নানা আয়োজন করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস
টপ নিউজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রদ্ধায় স্মরণ চট্টগ্রামে