পাহাড়ে বাড়ছে ভূমি দখল, নিরাপত্তাহীনতায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা
১৩ আগস্ট ২০২১ ০৮:৪৯ | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২১ ১৩:০৯
ঢাকা: কখনও ন্যাশনাল পার্ক, কখনও ইকো পার্ক, আবার কখনও নিরাপত্তা ক্যাম্প—তার উপরে রয়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প। এসবের নামে পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জমি দখলের ঘটনা বেড়ে গেছে। যে কারণে অনেকেই দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন, যারা বসবাস করছেন তারা ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়।
বৃহস্পতিবার ( ১২ আগস্ট) ‘আদিবাসীদের ভূমি সুরক্ষা ও করণীয় শীর্ষক’ এক অনলাইন আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পক্ষে সোহেল চন্দ্র হাজং বলেন, আদিবাসীরা ভূমিকে কেনাবেচার পণ্য হিসেবে যেমন ভাবতে পারে না, আবার ভূমিকে নিজের কর্তৃত্বে বা মালিকানায় নেওয়ার কথা অতীতে কখনও তারা চিন্তাও করেনি। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্রে ভূমিকে কেন্দ্র করে আদিবাসীদের প্রতি যত জুলুম, উচ্ছেদ, জবরদখল, কেনাবেচা, হত্যা, নির্যাতন, মিথ্যে মামলা, অপরাধীকরণ ইত্যাদি ঘটনা ঘটেই চলেছে। এখন ভূমি সমস্যাই আদিবাসীদের অন্যতম প্রধান সমস্যা।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পাহাড় ও সমতলে সমানতালে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা প্রভাবশালীদের মাধ্যমে কখনও ন্যাশনাল পার্ক, ইকো পার্ক, নিরাপত্তা ক্যাম্প ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে স্থানীয় আদিবাসীদের কাছ থেকে জোর জবরদস্তি করে তাদের ভূমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আদিবাসী অধিকার বিষয়ক সরকারের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি থাকলেও তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, প্রচলিত ভূমি রক্ষা আইনে আদিবাসী ও বাঙ্গালির ভূমি বেদখল বন্ধ করতে পারবে না এটা প্রমাণিত। সেজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে আলাদা করে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন হয়েছে। সমতলে ১৩ বছর আগে থেকে প্রতিশ্রুতি চলমান রয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আদিবাসীদের ভূমি রক্ষার ব্যপারে এথনিক রিলিজিয়াস অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েস্টিক মাইনরিটি থিমেটিক গ্রুপ নামে একটি কমিটি গঠন করেছেন। যারা আগামী ৩ মাসের মধ্যে আদিবাসীদের ভূমি রক্ষায় কি কি করা দরকার তা নিয়ে একটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দিবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশনকে অকার্যকর অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভুমি কমিশন গঠন করার কথা থাকলে এখনও গঠন করা হয়নি। সমতলের আদিবাসীদের জন্য মন্ত্রণালয় না থাকায় তারা সরকারের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন না।
তিনি বলেন, মানবাধিকার কমিশন একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারের কাছে আদিবাসীদের ভূমি রক্ষা রিপোর্ট জমা দিবে এবং আমরা ও সেটা পার্লামেন্টে নিয়ে যাব। সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্ট বসলে সেখানে আদিবাসী অধিকার আইনের প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হবে।
সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা বলেন, আদিবাসীরা যেন তাদের ভূমি রক্ষা করতে পারে এবং অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারে। আদিবাসীদের ভূমি সুরক্ষা আইন প্রণয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
বেলা’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজোয়ান হাসান বলেন, আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। সরকার আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করে না এবং যারা ব্যবহার করে তাদেরকে শব্দটি ব্যবহারে নিষেধ করেছে। এজন্য সরকার এনজিওগুলোকে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করতে চিঠি দিয়েছে। কাজেই ভূমি পরিবেশ এসব বিষয়ে আলোচনা করে আমরা এগোতে পারব না। সমস্ত বিষয় নিয়ে আমাদের একটি ‘পলিটিক্যাল ডিবেট’ প্রয়োজন। আ
এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, উপস্থাপিত ধারণাপত্রের সঙ্গে একমত পোষণ করি। আদিবাসীদের প্রতি যে ঐতিহাসিক অবিচার; বঞ্চনা ও বৈষম্য তা বিলুপ্ত হওয়া দরকার। তার জন্য আমরা লড়াই করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অনুরাগ চাকমা বলেন, আদিবাসীদের ভূমি অধিকারের সুরক্ষার বিষয়টি ‘মাল্টিভ্যারিয়েট’ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।
সিডিএ’র নির্বাহী পরিচালক শাহ- ই -মবিন জিন্নাহ বলেন, আদিবাসীদের ‘ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী’ বলার বিষয়ে আমাদেরকে আগে সমাধানে আসতে হবে। কেন তাদেরকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলা হবে। যে করেই হোক সকল ক্ষেত্রে আদিবাসী পরিচয়টি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সারাবাংলা/জেআর/এসএসএ